লাহোর টেস্টে চালকের আসনে পাকিস্তান
লাহোরে চলমান টেস্টে দারুণ অবস্থানে পাকিস্তান। তৃতীয় দিন শেষে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা ২৭৭ রানের টার্গেটে তাড়া করতে নেমে করেছে ২ উইকেটে ৫১ রান। অর্থাৎ পাকিস্তান এখন মাত্র আট উইকেট দূরে প্রোটিয়াদের টানা ১০ ম্যাচের জয়রথ থামিয়ে দেওয়ার।
লাহোরে এর আগে কখনো এত বড় রান তাড়া করে জেতেনি কোনো দল—অর্থাৎ ইতিহাস গড়তে হবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে, যদি জিততে চায়।
ম্যাচটি চলছে একেবারে স্ক্রিপ্ট মেনে—টস জিতে ব্যাটিং নেয় পাকিস্তান, প্রথম ইনিংসে ১০৯ রানের লিড পায়, এরপর দ্রুত রান তুলে দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বাঁচার লড়াইয়ে নামতে বাধ্য করে।
এই টেস্টে স্পিনাররাই মূল চরিত্র। দক্ষিণ আফ্রিকার সেনুরান মুথুসামি তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ার সেরা ১১ উইকেট (১১–১৭৪), যা দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে চতুর্থ সেরা স্পিন বোলিং ফিগার। কিন্তু তাতেও জয় পাওয়া কঠিন, কারণ পাকিস্তানের নোমান আলি নিজের দুর্দান্ত স্পিনে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং গুটিয়ে দিয়েছেন।
দিনের শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে ছিল চার উইকেট। সাজিদ খানের বল ছুঁয়ে মুথুসামি স্লিপে ক্যাচ তুলে দিলে আগার হাতে ধরা পড়েন। এরপর টনি ডি জরজি, যিনি আগের দিন অপরাজিত ছিলেন ৮১ রানে, শুরু করেন আক্রমণাত্মক ব্যাটিং। সাজিদকে মেরে চার, নোমানকে ছক্কা—এভাবেই পৌঁছে যান শতকে, যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি এবং উপমহাদেশে দ্বিতীয়টি।
তবে আগ্রাসনের ফলেই বিদায় নিতে হয় তাকে—নোমানের বল লং-অন বাউন্ডারিতে তুলে দেন শাহিন আফ্রিদির হাতে। তাতে নোমান পান তার পঞ্চম টেস্টে পরপর পঞ্চম পাঁচ উইকেট। এরপর নতুন বলে আবারও আঘাত হানেন তিনি, শেষ পর্যন্ত ইনিংস শেষ করেন ৬ উইকেট নিয়ে (৬–১১২)।
১০৯ রানের লিড নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় পাকিস্তান। ইমাম-উল-হক শূন্যতে স্টাম্প হন হারমারের বলে। এরপর রাবাদার দুর্দান্ত স্পেলে কাঁপে টপ অর্ডার, তবে বাবর আজম ও আবদুল্লাহ শফিক কিছুটা সামাল দেন।
বাবর ধীরে ধীরে ইনিংস গড়তে থাকেন, একপর্যায়ে আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। কিন্তু রাবাদার বল ভেতরে ঢুকে তার ব্যাক প্যাডে লাগে, রিভিউ নিয়েও রক্ষা পাননি—৪২ রানে বিদায়। তার আগে আগা সালমান ও সৌদ শাকিল কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও পাকিস্তান হঠাৎই ধসে পড়ে—শেষ ৭ উইকেট পড়ে মাত্র ৪৮ রানে, পুরো ইনিংস গুটিয়ে যায় ৩৭৮-তে।
মুথুসামি দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছেন ৬ উইকেট, ম্যাচে মোট ১১টি।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওপেনার মার্করাম ৩ রান করে নোমান আলির ঘূর্ণিতে বোল্ড, আর উইয়ান মুলডার দ্বিতীয়বারের মতো বাজে শটে স্লিপে ক্যাচ দেন আগার হাতে।
শেষ বিকেলে কিছুটা লড়াই করেন রায়ান রিকেলটন (২৯*) ও ডি জরজি (অপরাজিত), তবে বেশ কয়েকবার বিপদে পড়েছিলেন দুজনই—একবার রিকেলটনের ক্যাচ হাতছাড়া হয় শর্ট লেগে, আবার একবার লেগ-বিফোরের কাছাকাছি সিদ্ধান্তেও রক্ষা পান ডি জরজি।
দিন শেষে ৫১/২ তে থামে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস, আর পাকিস্তান তাকিয়ে থাকে আর মাত্র আটটি উইকেটের দিকে—যা পেলে শেষ হবে প্রোটিয়াদের টানা দশ টেস্টের জয়ের ধারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ৫১/২ (রিকেলটন ২৯*, নোমান ২–২০) ও ২৬৯ (ডি জর্জি ১০৪, নোমান ৬–১১২, সাজিদ ৩–৯৮); পাকিস্তান ১৬৭ (বাবর ৪২, মুথুসামি ৫–৫৭, হারমার ৪–৫১) ও ৩৭৮ (আগা ৯৩, ইমাম ৯৩, মুথুসামি ৬–১১৭)
লক্ষ্য: ২৭৭
অবস্থা: জয়ের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন আরও ২২৬ রান, পাকিস্তানের দরকার ৮ উইকেট।