৬ লাখ জনসংখ্যার দেশ কেপ ভার্দে বিশ্বকাপে
১০টি আগ্নেয় দ্বীপ নিয়ে গঠিত ছোট্ট এক দেশ—কেপ ভার্দ। ৪ হাজার বর্গকিলোমিটারের কিছু বেশি আয়তনে দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ৯৩ হাজার (২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী)। বিশ্ব ফুটবলের মানচিত্রে এতদিন অপরিচিতই ছিল পশ্চিম আফ্রিকার এই দ্বীপরাষ্ট্র। কিন্তু এবার তারাই লিখে ফেলেছে ইতিহাস—প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছে কেপ ভার্দে।
আফ্রিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে সবচেয়ে বেশি (৮ বার) বিশ্বকাপ খেলা ক্যামেরুনের গ্রুপ থেকেই বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে তারা। ফলে এই অর্জন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
গত মাসেই ক্যামেরুনকে হারিয়ে কার্যত বিশ্বকাপের দরজায় পৌঁছে গিয়েছিল ‘ব্লু শার্কস’ নামে পরিচিত কেপ ভার্দ দল। তবে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে বুধবার পর্যন্ত, যখন লিবিয়ার সঙ্গে ৩-৩ গোলের ড্রয়ে নিশ্চিত হয় তাদের জায়গা। অপেক্ষাটা অবশ্য মধুরই ছিল—কারণ শেষ ম্যাচটি ছিল নিজেদের মাঠে!
ঐতিহাসিক মুহূর্তকে ঘিরে সোমবার দেশজুড়ে ঘোষণা করা হয় সাধারণ ছুটি। আর সেই উৎসবের দিনে দলও ভরসা রাখে সমর্থকদের ওপর—এসওয়াতিনিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে ফেলে কেপ ভার্দে। পাহাড়ঘেরা জাতীয় স্টেডিয়ামে উপস্থিত প্রায় ১৫ হাজার দর্শক উল্লাসে ফেটে পড়ে, সেই আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে দ্বীপ থেকে দ্বীপে।
প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হয় কেপ ভার্দের উৎসব। ৪৮তম মিনিটে দালিয়ন লিভ্রামেন্তোর গোলে অচলাবস্থা ভাঙে, আর ছয় মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন উইলি সেমেদো। শেষ দিকে বদলি হিসেবে নামেন অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার স্টোপিরা—যিনি ২০০৮ সাল থেকে জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন। যোগ করা সময়ে গোল করে ৩৭ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় পূর্ণতা দেন দলের আনন্দকে।
১০ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে আফ্রিকার ষষ্ঠ দল হিসেবে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে কেপ ভার্দে। একই দিনে অ্যাঙ্গোলার সঙ্গে ড্র করায় ক্যামেরুনের পয়েন্ট দাঁড়ায় ১৯। এর আগে আফ্রিকা থেকে বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করেছে মরক্কো, তিউনিসিয়া, মিশর, আলজেরিয়া ও ঘানা।
জনসংখ্যার দিক থেকে কেপ ভার্দ হবে বিশ্বকাপে খেলা দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ—এর আগে একমাত্র আইসল্যান্ডই (২০১৮ বিশ্বকাপে) ছিল ছোট জনসংখ্যার দেশ হিসেবে বিশ্বমঞ্চে।
১৯৭৫ সালে পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়া দেশটির সরকারি পর্তুগিজ নাম ‘কাবো ভের্জে’। বর্তমানে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে তাদের অবস্থান ৭০তম। ১৯৮৬ সালে ফিফার সদস্য হওয়ার পর ২০০২ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অংশ নেয় কেপ ভার্দে।
আফ্রিকা কাপ অব নেশন্সে প্রথমবার অংশ নেয় ২০১৩ সালে, আর সেই আসরেই সবাইকে চমকে দিয়ে পৌঁছে যায় কোয়ার্টার-ফাইনালে। সর্বশেষ ২০২৩ আসরেও তারা খেলেছে শেষ আটে। এবার বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়ে দেশটির ফুটবল ইতিহাসে যোগ হলো সবচেয়ে বড় অর্জন।
এই উত্থানের পেছনে আছে সুপরিকল্পিত ফুটবল কাঠামো ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ। কেপ ভার্দে ফুটবল ফেডারেশনের অন্যতম সফল উদ্যোগ ছিল—দেশের বাইরের বিভিন্ন লিগে খেলা কেপ ভার্দে বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের খুঁজে এনে জাতীয় দলে যুক্ত করা। বর্তমান বিশ্বকাপ দলে ছয়জন খেলোয়াড়ের জন্ম নেদারল্যান্ডসে, এছাড়াও পর্তুগাল, ইতালি, ফ্রান্স ও আয়ারল্যান্ডে জন্ম নেওয়া ফুটবলারও রয়েছেন। দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই এখন ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবে খেলেন।
দৃঢ় পরিকল্পনা, প্রতিভা ও বিশ্বাস—এই তিনের সমন্বয়েই কেপ ভার্দে পৌঁছে গেছে তাদের স্বপ্নের গন্তব্যে, ফুটবলের সবচেয়ে বড় মঞ্চ—বিশ্বকাপে।