বাংলাদেশ কি হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারবে?
আফগানিস্তান তাদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশের স্বপ্ন দেখছে। মঙ্গলবার আবুধাবিতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে সেই সুযোগ পাচ্ছে তারা। তবে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে লাল-সবুজের দল।
দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তান মাত্র ১৯০ রান করেই বাংলাদেশকে গুটিয়ে দেয় ১০৯ রানে। দুই দলের আত্মবিশ্বাসের যে বিপরীতমুখী ধারা তৈরি হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর খুব একটা সম্ভাবনা দেখা যায়নি। আফগানিস্তানের লক্ষ্য এখন নিজেদের ব্যাটিং একটু গুছিয়ে তোলা, আর বোলারদের আগের মতো স্বাধীনভাবে খেলতে দেওয়া।
শনিবারের ম্যাচে তারা বাংলাদেশকে প্রায় গুঁড়িয়ে দেয়। আজমতউল্লাহ ওমরজাই প্রথম চার উইকেটের মধ্যে তিনটি নেন। তানজিদ হাসান ও সাইফ হাসান অপ্রয়োজনীয় শট খেলতে গিয়ে আউট হন, আর নাজমুল হোসেন শান্ত রান আউটের শিকার হন। এরপর রশিদ খান তাঁর নিখুঁত গুগলিতে মধ্য ও নিচের সারি ভেঙে দেন। তৌহিদ হৃদয় ও নুরুল হাসান স্লগ মারতে গিয়ে ব্যর্থ হন। নাঙ্গেয়ালিয়া খারোতে রশিদের আক্রমণের মাঝেই জাকার আলিকে আউট করে দেন।
আফগানিস্তানের বোলারদের এই দাপট দেখাতে হয়েছিল কারণ বাংলাদেশের ব্যাটাররা খুব একটা ভালো করতে পারেননি। মাঝের ওভারগুলোতে দল ভুগলেও ইব্রাহিম জাদরান ধৈর্য ধরে ব্যাট করে দলকে ৪৫তম ওভার পর্যন্ত টেনে নেন। ১৪০ বল খেলে মাত্র চারটি বাউন্ডারি মারেন তিনি, যা প্রমাণ করে ধীর পিচে স্ট্রাইক ঘোরানোর গুরুত্ব কতটা। যদিও মধ্যক্রম ব্যর্থ ছিল, খারোতে ও এএম গজনফর তাকে সঙ্গ দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ এক-দুজন পারফর্মার খুঁজে পেতেই হিমশিম খাচ্ছে। প্রথম ম্যাচে তারা ২২১ রান তুললেও আফগানিস্তান সহজে ৫ উইকেটে জয় পায়। ব্যাটিং দুর্বলতাই দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে ভার ফেলছে।
আবুধাবিতে ৫৫ ম্যাচের মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে কম রান (১৯০) করে জেতা দল। কিন্তু বাংলাদেশ এই ছোট লক্ষ্য তাড়াতেই ব্যর্থ হয়—মূলত টপ অর্ডারের ব্যর্থতা ও মধ্যক্রমের রশিদের কাছে আত্মসমর্পণের কারণে। বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ পরে বলেন, ‘আমাদের কখনও কখনও বল খেলতে হয়, বোলার নয়।’
তবে বাংলাদেশের বোলিং ও ফিল্ডিং প্রশংসনীয়। স্পিনাররা আফগানদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে, আর পেসাররাও প্রতিপক্ষের চেয়ে ভালো বল করছে। বোলাররা ম্যাচে ফেরার সুযোগ দিয়েছে, কিন্তু ব্যাটাররা তা কাজে লাগাতে পারছে না।
ইব্রাহিম জাদরান এখন আফগানিস্তানের ব্যাটিংয়ের ভরসা। তিনি ওপেনার রহমনুল্লাহ গুরবাজের আগ্রাসী স্টাইলের পরিপূরক, আর মাঝের ওভারগুলোয় নোঙরের ভূমিকা রাখেন। দীর্ঘ সময় ব্যাট করতে পারলে নিচের সারির পাওয়ার হিটারদের জন্য আদর্শ সঙ্গী হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন কন্ডিশনে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা ও বড় ইনিংস খেলার মানসিকতাই তার সবচেয়ে বড় শক্তি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তার ১৭৭ রানের ইনিংসই এর প্রমাণ। মঙ্গলবার সিরিজ ৩-০ করতে চাইলে তাকেই ঘিরেই আশাবাদী আফগানিস্তান।
বাংলাদেশের অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ এখনও দলকে সঙ্কট থেকে টেনে তুলতে পারেননি। তিনি নেতৃত্বে নতুন হলেও দলের অভিজ্ঞ সদস্য। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে দক্ষ হলেও সেটা দলের জয়ে রূপ নিচ্ছে না। দুর্বল ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে তাকে এখনই কিছু বদল আনতে হবে।
রহমত শাহর চোটে সুযোগ পাচ্ছেন দারউইশ রাসুলি। আফগানিস্তান চাইলে উইকেটশূন্য বোলার বাশির আহমদের জায়গায় আবদুল্লাহ আহমদজাই বা বিলাল সামিকে সুযোগ দিতে পারে।
সম্ভাব্য একাদশ:
আফগানিস্তান: রহমনুল্লাহ গুরবাজ (উইকেটকিপার), ইব্রাহিম জাদরান, সেদিকুল্লাহ আতাল, দারউইশ রাসুলি, হাশমতুল্লাহ শাহিদি (অধিনায়ক), আজমতউল্লাহ ওমরজাই, মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান, এএম গজনফর, নাঙ্গেয়ালিয়া খারোতে, আবদুল্লাহ আহমদজাই/বিলাল সামি।
বাংলাদেশ: তানজিদ হাসান/মোহাম্মদ নাঈম, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, তৌহিদ হৃদয়, মেহেদি হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), নুরুল হাসান (উইকেটকিপার), জাকার আলি/শামীম হোসেন, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান/নাহিদ রানা, তানভির ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান।
পিচ ও পরিস্থিতি:
আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামের ধীরগতির উইকেট ব্যাটিংকে কঠিন করে তুলেছে। বিশেষ করে মাঝের ওভারগুলোতে বাউন্ডারি খোঁজা কঠিন হয়ে যায়। আবহাওয়া এখনও প্রচণ্ড গরম।
পরিসংখ্যান ও তথ্য:
# রশিদ খানের এখন ওডিআইতে ছয়টি পাঁচ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড আছে—লেগস্পিনারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, শাহিদ আফ্রিদির (৯ বার) পরেই।
# দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের ১০৯ রান আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাদের সর্বনিম্ন স্কোর।
# আফগানিস্তান আবুধাবিতে প্রথম ইনিংসে ১৯০ রান করেও জিতেছে—এটি সেই মাঠে সর্বনিম্ন প্রথম ইনিংস স্কোরে জয়।
# রশিদ খান এখন পর্যন্ত তাওহিদ হৃদয়কে চারবার আউট করেছেন, যা মুশফিকুর রহিমের সমান—বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে সর্বাধিক।