এই মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আমার সরাসরি ছাত্র ছিল। আমাদের ইংরেজি বিভাগ থেকে যারা বেরিয়ে গেছে তাদের নিয়ে আমরা গর্ব করি, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম তাদের মধ্যে অত্যন্ত বিশিষ্ট একজন। মনজুরুল ছিল একাধারে শিক্ষক এবং লেখক। শিক্ষক হিসেবে অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়াত। অন্য কোনো পেশাতে তাকে মানাত
না। অন্য পেশায় অনেকেই তাকে আগ্রহ দেখিয়েছে, কিন্তু যায়নি। ওর বাবাও শিক্ষক ছিলেন এবং সেই শিক্ষকতার উত্তরাধিকারটাই পেয়েছে মনজুরুল ইসলাম। পেশাকে আরও প্রসারিত করেছে।
আমি মনজুরুল ইসলামকে ছাত্রজীবনে যেভাবে মনোযোগী দেখেছি, পড়াশোনার ব্যাপারে শিক্ষক হিসেবেও সে রকম একাগ্রচিত্ত এবং অত্যন্ত গভীর দেখেছি। ভালোবাসার সঙ্গে শিক্ষকতা করত। শিক্ষার্থীরা তাকে খুব ভালোবাসত, মনজুরুলও ছাত্রছাত্রীদের খুব ভালোবাসত। উৎসাহিত করত। অনুপ্রাণিত করত। আর দ্বিতীয় যে কথাটা বললাম, মনজুরুল লেখকও ছিল এবং সাহিত্যের অধ্যাপনা ও সাহিত্যের চর্চা করত। এগুলোকে সে একত্র করেছিল এবং সঙ্গতভাবেই সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছে। আবার রাষ্ট্রীয়ভাবে একুশে পদক পেয়েছে। সাহিত্য চর্চার জন্য এগুলো তার প্রাপ্য ছিল।
আর সাহিত্যিক হিসেবেও সে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেছিল। অল্প সময়ের মধ্যেই কথাসাহিত্যে, সমালোচনা সাহিত্য এবং দৈনিক পত্রিকাতে সে নতুন বইয়ের ওপরে লিখত। সংবাদের ভাবনা দিয়ে আবার সে আরেকটা বিশেষ জায়গায় ছিল, যেটা চিত্রকলার সমালোচনা। চিত্রকলার সমালোচনার ধারাটা আমাদের এখানে বেশ বিকশিত হয়নি। এখানে এই জায়গাটাতেও তার একটা অবস্থান ছিল এবং ভালো অবদান ছিল। এই চিত্রকলার সমালোচনাটাকে খুব মনোযোগ দিয়ে করত। সে এগুলো বুঝত আর এই নন্দনতত্ত্বে তার আগ্রহও ছিল। নন্দনতত্ত্বে তার পড়াশোনা ছিল।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আমি মনজুরুল ইসলামকে কখনও অসুস্থ অবস্থায় দেখিনি বা অসুস্থ আছে বা তার অসুখ আছে বুঝতে পারিনি। আমি হাঁটা অবস্থায় দেখতাম এবং মনে হতো যখন হাঁটছে তখনও সে চিন্তা করছে। একটা কাজে যাচ্ছে বা কাজ থেকে ফিরছে, এর বাইরে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে কখনও ভাবতে পারিনি। সে সাহিত্য পত্রিকাও সম্পাদনা করত। মাসিক কালি ও কলম পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ছিল। মনজুরুল এগুলোতে মনোযোগ দিয়ে কাজ করেছে।
কী সহজভাবে মনজুরুল ইসলাম দায়িত্বগুলোকে বহন করত। এতে তার কোনো ক্লান্তি আছে বলে মনে হয়নি। খুব সহজভাবে করতে পেরেছে। মনজুরুল ইসলামের এ রকম হঠাৎ মৃত্যু মেনে নেওয়াটা আমার জন্য খুবই কঠিন। আমি শুনেছিলাম, কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আশা করছিলাম, সে সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফেরত আসবে। কিন্তু সে পরপারে পাড়ি দিল, আশা পূরণ হলো না। আমার পক্ষে এটা খুব মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের দৃষ্টান্ত ছিল, যা অনুকরণীয় এবং অনুপ্রেরণারও।
অনুলিখন : রণজিৎ সরকার
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন