দোয়া কখনও নিষ্ফল যায় না

মুহাম্মদ সালমান শফী
১০ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
দোয়া কখনও নিষ্ফল যায় না

দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে বান্দার সম্পর্কের একটি সেতুবন্ধ তৈরি হয়। এ বন্ধনকে সুদৃঢ় ও মজবুত করার মাধ্যম বারবার আল্লাহ তায়ালাকে ডাকা। আর আল্লাহ তাঁর বান্দার খুব কাছেই থাকেন। আল্লাহ তায়ালাও কামনা করেন তাঁর বান্দা তাঁর কাছেই বারবার চাইবে।

এক সাহাবি হজরত রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে জানতে চান- ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের প্রভু কি আমাদের কাছে, না দূরে? যদি কাছে হন তবে আমরা তাঁর সঙ্গে মোনাজাত করব বা চুপে চুপে কথা বলব। আর যদি তিনি দূরে হন তাহলে আমরা জোরে জোরে তাঁকে ডাকব। জবাবে আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কারিমের সুরা বাকারার ১৮৬ নম্বর আয়াত নাজিল করেন- ‘এবং যখন আমার বান্দারা আপনাকে আমার বিষয়ে প্রশ্ন করে তখন তাদের জানিয়ে দিন, আমি তাদের নিকটবর্তী।’ (ইবনে কাসির)

আল্লাহ তায়ালা যখন বান্দার নিকটবর্তী তখন বান্দার উচিত বেশি বেশি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় দোয়া করেই আমরা হা-হুতাশ করি। ত্বরিত ফল পাওয়ার প্রত্যাশা করি। ফল না পেলে হতাশ হয়ে যাই। দু’চারবার দোয়া করার পর ফল না পেলে দোয়া করাই ছেড়ে দিই। অথচ কোনো মুসলিমকে আল্লাহ খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না। দোয়া কখনও নিষ্ফল হয় না, শূন্যহাতে বান্দাকে ফিরিয়ে দিতে আল্লাহ নিজেই লজ্জা পান। হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মানুষ তাঁর দিকে দুখানা হাত ওঠায় তখন তিনি তা ব্যর্থ ও শূন্যভাবে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান।’ (জামে তিরমিজি)

আল্লাহর কাছে বান্দা যদি পাপ বা ক্ষতিকারক কিছু না চায় তাহলে সেই চাওয়া আল্লাহ কবুল করেন। হজরত উবাদা ইবনে সামিত (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘জমিনের বুকে যে কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে- যে দোয়ায় কোনো পাপ বা আত্মীয়তার ক্ষতিকারক কিছু না চায়- তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার দোয়া কবুল করবেনই। হয় তাকে তার প্রার্থিত বস্তু দেবেন অথবা তদনুযায়ী তার কোনো বিপদ কাটিয়ে দেবেন।’ (জামে তিরমিজি)

দোয়া করেই ত্বরিত ফল চাইতে গিয়ে যদি হতাশা প্রকাশ কিংবা হা-হুতাশ করতে থাকি তবে তা হবে হিতে বিপরীত বা ক্ষতিকারক। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ পাপ বা আত্মীয়তার ক্ষতিকারক কোনো কিছু প্রার্থনা না করে ততক্ষণ তার দোয়া কবুল করা হয়, যদি না সে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।’ বলা হলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! ব্যস্ততা কীরূপ? তিনি বললেন, ‘দোয়াকারী বলতে থাকে, দোয়া তো করলাম, দোয়া তো করলাম, মনে হয় আমার দোয়া কবুল হলো না। এভাবে সে হতাশ হয়ে পড়ে, তখন দোয়া করা ছেড়ে দেয়।’ (সহিহ মুসলিম)

দোয়ার ব্যাপারে এটি নিশ্চিত যে, বান্দা আল্লাহর কাছে চাইলে, দোয়া করলে মুমিন-মুসলমানের দোয়া আল্লাহ ব্যর্থ করে দেন না। হয় তিনি তা বান্দাকে সঙ্গে সঙ্গে দেবেন নতুবা পরকালের জন্য তা জমা রাখবেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে মুখ তুলে কিছু প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাকে তা দেবেনই। হয় তাকে তা সঙ্গে সঙ্গে দেবেন অথবা (আখিরাতের জন্য) তা জমা করে রাখবেন।’ (মুসনাদ আহমদ)

আরেক হাদিসে এসেছে, দোয়া করলে তিন বিষয়ের অন্তত একটি আল্লাহ বান্দাকে প্রদান করবেন। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যখনই কোনো মুসলিম পাপ ও আত্মীয়তা নষ্ট করা ছাড়া অন্য যে কোনো বিষয় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তখনই আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করে তাকে তিনটি বিষয়ের একটি দান করেন; হয় তার প্রার্থিত বস্তুই তাকে সঙ্গে সঙ্গে প্রদান করেন অথবা তার প্রার্থনাকে (প্রার্থনার সওয়াব) আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখেন অথবা দোয়ার সমপরিমাণ তার অন্য কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন।’ এ কথা শুনে সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে আমরা বেশি বেশি দোয়া করব। তিনি উত্তরে বললেন, ‘আল্লাহ তায়ালা আরও বেশি বেশি দোয়া কবুল করবেন।’ (জামে তিরমিজি)


মুহাম্মদ সালমান শফী : ইমাম ও খতিব, দারোগা আমীর উদ্দিন ঘাট জামে মসজিদ, বাবুবাজার, ঢাকা