সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রাজনৈতিক দমন নিয়ে হিউম্যান রাইটসের উদ্বেগ
বাংলাদেশে সদ্য সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহারের প্রসার নিয়ে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেপ্তারের ঘটনা যেন আরও বৃদ্ধি না পায় এবং সরকারকে তা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কভিত্তিক এ মানবাধিকার সংস্থা তাদের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। তিন সপ্তাহের সহিংস আন্দোলনের পর ১,৪০০ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর চলতি বছরের ১২ মে সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে সভা, প্রকাশনা ও অনলাইন কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করা হয়।
এইচআরডব্লিউর এশিয়া বিভাগের উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার যেন পূর্বের সরকারের মতো দলীয় পক্ষপাতিত্বে না ফেরে। কারাগারে বন্দি করা বা শান্তিপূর্ণ বিরোধিতা দমন করা সেই পথে ফেরার সমতুল্য। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে এখনই নজরদারি বাড়াতে হবে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেফতার বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
আরও পড়ুন:
‘হামাসকে ধ্বংস করা যাবে না’
সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে হাজারো মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে দুর্বল অভিযোগে হত্যাকাণ্ড বা সহিংসতার মামলায় অভিযুক্ত। আটক ব্যক্তিরা হেফাজতে নির্যাতন এবং চিকিৎসা বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন, যা পূর্বের সরকারের ঘটনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ২৮ আগস্ট ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটি ভবনে অনুষ্ঠিত ‘মঞ্চ ৭১’ আলোচনায় অংশ নেওয়া ১৬ জনকে গ্রেফতার করা। অনুষ্ঠানটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে হলেও সেখানে কিছু ব্যক্তি অংশগ্রহণকারীদের ‘আওয়ামী লীগপন্থী’ আখ্যায়িত করে হেনস্তা করে। এরপর পুলিশ সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাসহ আরও ১৫ জনকে আটক করে। তাদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
প্রসঙ্গত, সাংবাদিক পান্নাকে আদালতে হেলমেট, হ্যান্ডকাফ ও বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরিয়ে আনা হয়। অন্য সাংবাদিকদের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে এক পরিবারের সদস্য বলেন, ‘এটি ছিল আলোচনা সভা, রাজনৈতিক সমাবেশ নয়। তাহলে কিভাবে সন্ত্রাসবাদ হবে?’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রণয়ন করেছিল। ২০২৫ সালে ইউনূস সরকার আইনে সংশোধনী আনে। তবে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, নতুন আইন শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সীমিত করছে। বাংলাদেশ এডিটরস কাউন্সিলও সতর্ক করেছে, এটি স্বাধীন সংবাদ পরিবেশ সংকুচিত করবে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, সরকারের অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিতে রক্ষণশীল ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সহিংসতা বেড়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অন্তত ১৫২ জন জনতা দ্বারা হামলায় নিহত হয়েছে।
এইচআরডব্লিউর মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘এখন সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ নিশ্চিত করা। সন্ত্রাসবিরোধী আইনকে রাজনৈতিক দমননীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।’