কনশায়েন্স জাহাজের যাত্রীদের নেওয়া হলো ইসরায়েলে
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান শহিদুল আলমের ।। শহিদুলকে ফেরানোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান বিভিন্ন দলের
সাংবাদিক, চিকিৎসক ও অধিকারকর্মীদের বহনকারী গাজা অভিমুখী জাহাজটি (কনশায়েন্স) গতকাল বুধবার মাঝসমুদ্রে ইসরায়েলি বাহিনী আটকে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। তিনি বলেন, তিনি নিজেও অপহরণের শিকার হয়েছেন। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় সকাল সোয়া ১০টার দিকে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিওবার্তায় শহিদুল আলম এ কথা বলেন। এদিকে আটক যাত্রীদের ইসরায়েলের একটি বন্দরে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ভিডিওবার্তায় এ আলোকচিত্রী বলেন, ‘আমি শহিদুল আলম, বাংলাদেশের একজন আলোকচিত্রী ও লেখক। আপনারা যদি এই ভিডিও দেখে থাকেন তা হলে শুনুন, আমাদের সাগরে আটকে দেওয়া হয়েছে এবং আমাকে ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী অপহরণ করেছে। এরা সেই দেশের বাহিনী, যারা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা শক্তির সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা নিয়ে গাজায় জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে আমি আমার সব সহযোদ্ধা ও বন্ধুর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
শহিদুল আলম কনশায়েন্স নামের যে জাহাজে ছিলেন, তা আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) ও থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা (টিএমটিজি) নৌবহরের একটি জাহাজ। আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও চিকিৎসাকর্মীবাহী এই জাহাজ ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গাজা অভিমুখে রওনা হয়েছিল।
এর আগে মঙ্গলবার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শহিদুল বলেছিলেন, বুধবার ভোরে তাঁরা রেড জোনে পৌঁছে যেতে পারেন। রেড জোন বলতে শহিদুল আলম মূলত সেই বিপজ্জনক অঞ্চলকে বুঝিয়েছেন, যেখানে ইসরায়েলি সেনারা সম্প্রতি সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরকে আটকে দিয়ে অধিকারকর্মীদের আটক করেন। সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের নৌযানগুলোও ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে গাজায় ঢোকার চেষ্টা করেছিল।
কনশায়েন্স জাহাজ আটকের খবর নিশ্চিত করল ফ্রিডম ফ্লোটিলা
গাজা অভিমুখী সাংবাদিক, চিকিৎসক ও অধিকারকর্মীদের নৌবহরকে ইসরায়েলি বাহিনী আটকে দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন কর্তৃপক্ষ। ফ্লোটিলা কর্তৃপক্ষ বলেছে, সামরিক বাহিনীর (ইসরায়েলি) সদস্যরা দ্য কনশায়েন্স জাহাজটির দখল নিয়েছে। ওই জাহাজে ৯৩ জন সাংবাদিক, চিকিৎসক ও অধিকারকর্মী আছেন। এর আগে গাজা অভিমুখী আরও তিনটি ছোট নৌযানকে আটকে দেয় তারা।
এদিকে সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও নিশ্চিত করেছে, ফ্রিডম ফ্লোটিলার নৌবহরে অভিযান চালানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ‘বৈধ নৌ অবরোধ ভাঙা ও যুদ্ধাঞ্চলে ঢোকার আরেকটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা কোনো ফল ছাড়াই শেষ হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
‘হামাসকে ধ্বংস করা যাবে না’
ইসরায়েলি মন্ত্রণালয় আরও দাবি করেছে, ‘নৌযানগুলো ও যাত্রীদের একটি ইসরায়েলি বন্দরে স্থানান্তর করা হয়েছে। সব যাত্রী নিরাপদ ও সুস্থ আছেন। আশা করা যাচ্ছে, যাত্রীদের দ্রুত ফেরত পাঠানো হবে।’
আটক যাত্রীদের মধ্যে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, ডেনমার্কসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকরা রয়েছেন।
দুই বছর ধরে চলমান যুদ্ধে ইসরায়েল বিদেশি সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছে। এ সময়ে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের নিশানা করছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ২৭০ জনের বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। অনেকে আটক হয়ে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি আছেন।
শহিদুলকে ফেরানোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান বিভিন্ন দলের
শহিদুল আলমকে ফেরানোর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্টজনেরা বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার ফেসবুক পোস্টে শহিদুল আলমের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ‘ফ্রি শহিদুল আলম’ শিরোনামের পোস্টে তিনি বলেন, বাংলাদেশে তার নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
শহিদুল আলমকে আটকের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গতকাল এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানান দলটির সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, আটক শহিদুল আলমসহ সব মানবাধিকারকর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। আমি বিশ্ববাসীর প্রতি এ বিষয়ে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
শহিদুল আলমের মুক্তির দাবিতে গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে রাজধানীর ইস্কাটনের বিয়ামের গলির মাঠে গতকাল সংহতি সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ও বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তাদের মুক্তির জন্য সর্বোচ্চ ভূমিকা নিতে হবে। সমাবেশ শেষে অংশগ্রহণকারীরা একটি প্রতিবাদী মিছিল নিয়ে ইস্কাটন-মগবাজার এলাকা প্রদক্ষিণ করেন।
সহমর্মিতা প্রকাশ প্রেস সচিবের
শহিদুল আলম ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়ায় গভীর উদ্বেগ ও তার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বুধবার এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, শহিদুল আলমের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন, তবে একই সঙ্গে আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার প্রতিও। শহিদুল আলমসহ নৌবহরের সব যাত্রীর অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান প্রেস সচিব।
আটককৃতদের মুক্তি দাবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের
শহিদুল আলমসহ আটককৃতদের মুক্তি দাবি করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। একই সঙ্গে জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশ সরকারের জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশা করেন তারা। বুধবার সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী এবং সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ এক যৌথ বিবৃতিতে এসব দাবি জানান।
জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
শহিদুল আলমের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বর থেকে এ মিছিল শুরু করেন তারা। ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটক দিয়ে বেরিয়ে শাঁখারীবাজার ও বাহাদুর শাহ পার্কসংলগ্ন বিশ্বজিৎ চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে এ মিছিল শেষ হয়। এ সময় আপ বাংলাদেশের নেতা মাসুদ রানা, শাখা বাগছাস আহ্বায়ক মো. ফয়সাল মুরাদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম মারুফ, ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসীব, ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম আরিফ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), ঢাবি ও জবি প্রতিনিধি