উইন্ডিজ ক্রিকেটারদের যে কারণে মেসির উদাহরণ দিলেন লারা

স্পোর্টস ডেস্ক
০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৩১
শেয়ার :
উইন্ডিজ ক্রিকেটারদের যে কারণে মেসির উদাহরণ দিলেন লারা

বার্সেলোনার একাডেমিতে লিওনেল মেসি বেড়ে উঠলেও হৃদয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। জন্মভূমির হয়ে খেলার গর্ব ও আবেগ আজও ফুটে ওঠে তার প্রতিটি পারফরম্যান্সে। এই উদাহরণ টেনেই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের উজ্জীবিত করার বার্তা দিলেন কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা।

উইন্ডিজ ক্রিকেটে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে মন্দা সময়, বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে। যে সংস্করণে একসময় তারা ছিল অপ্রতিরোধ্য, আজ সেই জায়গায় তারা নিচের সারিতে। সাম্প্রতিক ভারত সফরে প্রথম টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে তারা সাড়ে তিন দিনের মধ্যেই। এর আগে নিজেদের মাটিতেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল দলটি।

টেস্টে ভারতের কাছে হারার পর ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক রোস্টন চেইস অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও অর্থের অভাবকেই পতনের কারণ হিসেবে দেখান। তার সঙ্গে একমত লারাও, তবে তিনি মনে করেন—শুধু অর্থ নয়, জাতীয় দলের হয়ে খেলার আবেগ ও ভালোবাসাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

লারা বলেন, ‘কিছু গড়তে গেলে অবশ্যই মূলধন লাগে। তবে আমি চেইসসহ সবাইকে বলতে চাই—তারা কি সত্যিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে চায়? তাদের হৃদয়ে কি ক্রিকেটের প্রতি সেই ভালোবাসা আছে? যদি থাকে, তাহলে পথ অবশ্যই পাওয়া যাবে।’

নিজের সময়ের অভিজ্ঞতা টেনে লারা বলেন, ‘আমাদের সময়ও কিন্তু সুযোগ-সুবিধা খুব একটা ছিল না। ভিভ রিচার্ডসও কখনো নিখুঁত অনুশীলন পিচে ব্যাট করেননি। কিন্তু আমাদের তাড়না ছিল অন্যরকম—ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলার গর্বটাই ছিল আসল প্রেরণা।’

ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে বর্তমানে বড় সমস্যা হলো, জাতীয় দলে একটু ভালো করলেই অনেক খেলোয়াড় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ঝুঁকে পড়ছেন। ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেল, ডোয়াইন ব্রাভো বা সুনিল নারাইনের মতো তারকারা একসময় বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি ছেড়ে বেছে নিয়েছিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ।

অর্থের প্রলোভনে এমন সিদ্ধান্তকে লারা দোষ হিসেবে দেখেন না, তবে জাতীয় দলের গুরুত্ব ভুলে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ‘বিদেশে ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করায় কাউকে দোষ দিতে পারব না,” বলেন টেস্টে ৪০০ রানের মালিক লারা। “কিন্তু ক্রিকেটারদের বোঝা উচিত, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলার গর্বটাই সবচেয়ে বড় বিষয়।’

এই প্রেক্ষাপটে তিনি টানলেন মেসির উদাহরণ—‘মেসি ইউরোপে বেড়ে উঠেছে, কিন্তু খেলেছে আর্জেন্টিনার হয়ে। বার্সেলোনা, পিএসজি—সব জায়গায় খেলেও তার কাছে দেশের জার্সিই ছিল সবচেয়ে গর্বের। দক্ষিণ আমেরিকার অনেক ফুটবলারই সেটি অনুসরণ করে, আমাদের ক্রিকেটারদেরও তাই করা উচিত।’

শেষে লারা বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড দেখিয়ে দিয়েছে, কীভাবে নিজেদের ক্রিকেটারদের দেশের প্রতি অনুগত রাখা যায়। আমাদেরও সেই পথ খুঁজে বের করতে হবে। এটি কারও একার দায়িত্ব নয়—খেলোয়াড়, কোচ, প্রশাসন—সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটকে হৃদয়ে ধারণ করলেই সামনে এগোনোর রাস্তা মিলবে।’