বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৮ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫৩
শেয়ার :
বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৮ শতাংশ


বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সময়োপযোগী সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। বহুজাতিক এই উন্নয়ন সংস্থাটি বলেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের বিপর্যয়ের পর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানি বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অর্থনীতিতে এসেছে ইতিবাচক গতি।

এদিকে মূল্যস্ফীতির চাপ কমার ফলে বেসরকারি ভোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪.৮ শতাংশে উন্নীত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট অক্টোবর সংস্করণে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের বিভাগীয় পরিচালক জ্যঁ পেম।

বিশ্বব্যাংক জানায়, বাংলাদেশে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে মারাত্মক ব্যাঘাত সত্ত্বেও পরবর্তী প্রান্তিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি ফিরে এসেছে। বহিরাগত খাতের চাপ হ্রাস, রিজার্ভ স্থিতিশীলতা এবং মুদ্রাস্ফীতি কমে আসা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে স্বস্তি এনে দিয়েছে।

তবে এখনও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, বেসরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি তীব্রভাবে মন্থর, কর্মসংস্থান সৃষ্টি স্থবির এবং উচ্চ অনাদায়ী ঋণের কারণে ব্যাংকিং খাত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দুর্বল রাজস্ব আদায়ও অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে বিনিয়োগের উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে তা মন্থর থাকতে পারে, যা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ব্যাংকিং খাতে চলমান দুর্বলতা প্রতিফলিত করে।

বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, আমদানি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলতি হিসাবের ভারসাম্য সামান্য ঘাটতিতে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উন্নতির ফলে রাজস্ব বৃদ্ধির কারণে রাজস্ব ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে থাকবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের মতে, প্রধান অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে একটি হলো এমন সংস্কার বাস্তবায়ন করা, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং প্রতিযোগিতামূলকতাকে শক্তিশালী করে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধির জন্য আরও সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে; বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে এবং আরও উন্নত কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে উৎসাহিত করে। এর জন্য প্রয়োজন হবে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করা : নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করা, বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের বিধিনিষেধ হ্রাস করা, অর্থায়নের সুযোগ উন্নত করা, বিরোধ নিষ্পত্তি করা এবং বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করা।

ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার এবং স্থিতিস্থাপকতা তৈরি

আর্থিক সুরক্ষা জাল এবং সংকট ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ; কার্যকর ব্যাংক পুনর্গঠন এবং দ্রুত খেলাপি ঋণ, নিষ্পত্তি এবং করপোরেট প্রশাসন ও প্রয়োগের উন্নতির মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতের স্বাস্থ্যকে সুশৃঙ্খল এবং স্থায়ীভাবে পুনরুদ্ধার করা।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের উন্নতি

বাংলাদেশের রাজস্ব ও জিডিপি অনুপাত বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। সরকার কিছু উল্লেখযোগ্য সংস্কার শুরু করেছে (যেমন, কর নীতি এবং কর প্রশাসন পৃথকীকরণ, কর ব্যয় হ্রাস ইত্যাদি)। এসব সংস্কার বাস্তবায়ন করা এবং দীর্ঘস্থায়ী কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা গুরুত্বপূর্ণ।

ভবিষ্যতে যে নীতির ওপর ফোকাস করতে হবে

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন চাহিদা পূরণের জন্য স্থানিক পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগ শক্তিশালীকরণ। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে স্থানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা শক্তিশালী করা, প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় ব্যবস্থার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোর (যেমনÑ পরিবহন, সরবরাহ, অর্থনৈতিক অঞ্চল) জন্য মহানগর উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং সেক্টরাল মাস্টারপ্ল্যান আপডেট করা, কৌশলগত পরিকল্পনা এবং বাজেট প্রক্রিয়ার একীকরণ ত্বরান্বিত করা, উপজেলা বা জেলা অফিসগুলোয় কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয়ের ক্রমবর্ধমান অংশ অর্পণ করা, নগর/স্থানীয় সরকারগুলোকে তাদের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে ক্ষমতায়ন করা। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে নগর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে (ইউএলজিআই) তাদের রাজস্ব প্রশাসন উন্নত করার জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধির সহায়তা প্রদান করা, স্থানীয় সরকার বিভাগের এডিপি ব্লক অনুদান বরাদ্দ বৃদ্ধি করা, ব্লক অনুদান বরাদ্দের জন্য সূত্রভিত্তিক এবং জনসংখ্যাভিত্তিক বরাদ্দ ব্যবহার করা, ইউএলজিআইগুলোতে মূল নিযুক্ত কর্মী (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, অর্থ কর্মকর্তা) থাকা নিশ্চিত করা এবং তাদের কাছে সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার (যেমনÑ পরিকল্পনা, ক্রয়) জন্য সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষণ রয়েছে, তা নিশ্চিত করা।

প্রতিবেদনে বলা হয়Ñ ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে এবং শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ ৬৯ শতাংশ থেকে কমে ৫৮.৯ শতাংশে নেমেছে। নতুন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ২৪ লাখ নারী শ্রমবাজারের বাইরে রয়েছেন।

ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের ডিভিশন ডিরেক্টর জ্যঁ পেম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি দৃঢ়তা দেখিয়েছে। তবে এ স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে সংস্কার জরুরি। রাজস্ব বৃদ্ধি, জ্বালানি ভর্তুকি হ্রাস, নগরায়ণ ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করার পাশাপাশি আরও বেশি ও ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে।