এমপিও শিক্ষকের বাড়িভাড়া বাড়ল ৫শ টাকা
শিক্ষক দিবসের সকালে যখন দেশের শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষকদের সম্মান ও অবদানের প্রশংসা ঝরছিল বক্তৃতায়, ঠিক সেই সময়ই সরকারি প্রজ্ঞাপনের এক খণ্ড সংবাদ যেন ছুরি চালাল তাদের হৃদয়ে। দীর্ঘ আন্দোলনের পর এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ানো হলো মাত্র ৫০০ টাকাÑ যা শিক্ষক সমাজের কাছে এক প্রকার ‘উপহাস’ বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রবিধি শাখা থেকে জারি হওয়া অনুমোদনের ভিত্তিতে ৫ অক্টোবর (রবিবার) প্রকাশিত নতুন পরিপত্রে বলা হয়, ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা ১ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হলো।’ এতে আর্থিক বিধি-বিধান অনুসরণের শর্তও যুক্ত করা হয়।
কিন্তু শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান চলাকালেই যখন এই পরিপত্রটি প্রকাশিত হয়, ক্ষোভে ফেটে পড়েন দেশের শিক্ষকরা। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষক সংগঠনের নেতারা সরব প্রতিক্রিয়া জানান। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের
সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, শিক্ষক দিবসে মাত্র ৫০০ টাকা বাড়িভাড়া বৃদ্ধি শিক্ষকদের সঙ্গে প্রকাশ্য উপহাস। আমরা এই পরিপত্র প্রত্যাখ্যান করছি। সরকার যদি মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া নির্ধারণ না করে, তবে ১২ অক্টোবর থেকে ঢাকায় লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু হবে।
একই প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে অন্যান্য শিক্ষক সংগঠনেও। বাংলাদেশ মাধ্যমিক কারিগরি শিক্ষক পরিষদ গতকাল ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে আয়োজিত সম্মেলনে ঘোষণা দেয়Ñ এই ৫০০ টাকার প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে হবে, না হলে দেশজুড়ে ক্লাস বর্জনসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন:
হরতাল-অবরোধে শীতের পোশাক ব্যবসায় মন্দা
রাজধানী ছাড়াও বরিশাল, ভোলা, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন জেলায় শিক্ষকরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। বরিশালের শিক্ষকরা রাস্তায় স্লোগান তোলেনÑ বাড়িভাড়া ৫০০ টাকাÑ মানি না, মানব না!
দেশজুড়ে এমপিওভুক্ত প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক ও ১ লাখ ৭৭ হাজার কর্মচারী মাসে মাত্র ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পেয়ে আসছেন। এখন বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়লেও শিক্ষকরা বলছেন, এই সামান্য বৃদ্ধিতে বর্তমান বাজারে টিকে থাকা অসম্ভব।
ভোলার শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘শিক্ষক দিবসে এমন প্রজ্ঞাপন আমাদের অপমান করেছে। আমরা মর্যাদার আশা করেছিলাম, পেলাম উপহাস।’ রাজবাড়ীর শিক্ষক আব্দুল সালাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সকালে সম্মান জানাল সরকার, দুপুরে দিল তামাশার উপহার।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলী জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে ঠিকই, তবে নতুনভাবে শিক্ষকদের মূল বেতনের শতাংশ হারে বাড়িভাড়া নির্ধারণের প্রস্তাব তৈরি হচ্ছে। সেটি অনুমোদিত হলে এই পরিপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
অন্যদিকে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার একই দিনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘সরকার শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নে আন্তরিকভাবে কাজ করছে।’ কিন্তু মাঠপর্যায়ের শিক্ষকরা বলছেন, বক্তৃতায় সম্মান মিললেও বাস্তবে আমরা অপমানিত হচ্ছি।
শিক্ষক দিবসের এই দিনে তাই সারাদেশের শিক্ষাঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে ‘৫০০ টাকার প্রজ্ঞাপন’। কেউ একে বলছেন তামাশা, কেউ বলছেন প্রতারণা, কেউ বলছেন অবমূল্যায়ন।
একজন শিক্ষক ক্ষোভভরে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেনÑ ‘আমাদের প্রাপ্য সম্মান ৫০০ টাকায় কেনা যায় না। আমাদের মর্যাদা এখন সরকারি কাগজে গচ্ছিত।’
একটি দিবস, যা হওয়ার কথা ছিল শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার প্রতীকÑ সেটিই পরিণত হয়েছে হতাশা ও ক্ষোভের দিনে। শিক্ষকরা বলছেন, সম্মান চাই, ভিক্ষা নয়।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল