বর্জনের ভোটে কে হবেন সভাপতি
বহুল আলোচিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন আজ। সব পক্ষের উপস্থিতিতেই নির্বাচনটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষের দিকে তামিম ইকবাল এবং বিএনপিপন্থি ৯০ শতাংশ সংগঠক ছাড়াই হচ্ছে নির্বাচন। গতকালও শেষ চেষ্টা করেছেন বিএনপিপন্থি সংগঠকরা। তারা তিনটি দাবি রেখেছেন। তা গৃহীত হয়নি। আজ সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পরিচালক নির্বাচনের ভোট। সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়।
বিসিবি নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী আগে কাউন্সিলররা নির্বাচিত হন, এর পর তারা ডিরেক্টর ঠিক করেন আর ডিরেক্টররা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন। সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও ফারুক আহমেদ ভোটের ময়দানে আছেন। তফসিল অনুযায়ী হোটেল সোনারগাঁয়ে রাত নয়টায় জানা যাবে নতুন সভাপতির নাম।
গতকাল ১৫টি ক্লাবের নির্বাচন নিয়ে সমস্যা নেই বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট। আর ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন হতে কোনো বাধা নেই জানিয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে নির্বাচন পুনঃতফসিল এবং আরও কিছু দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে ক্লাব কাউন্সিলরদের পক্ষে স্মারক লিপি দেন রফিকুন ইসলাম বাবু। এর আগে গত শনিবার মোহামেডান ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন বাতিলের দাবি জানায় ৪৮টি ক্লাব। বিতর্কিত নির্বাচন বাতিল না হলে আন্দোলনের হুমকি দেয় তারা। ভোটাধিকার ফিরে পাওয়া ১৫ ক্লাবের প্রতিনিধিও ছিলেন সেখানে।
২০ জন পরিচালক প্রার্থীর সরে দাঁড়ানো আর হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশের কারণে নির্বাচনের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু সে ধোঁয়াশা কেটে যায়। হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছেন নির্বাচন হবে।
এর আগে তামিম ইকবাল বিএনপি প্যানেল থেকে নির্বাচন করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। কিন্তু তার কাউন্সিলরশিপ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেখানে পাস করার পর তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার মধ্যে যোগাযোগ ও চিঠি চালাচালি চলে। গুঞ্জন আছে, ফারুক আহমেদকে বিসিবিতে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন আসিফ মাহমুদ। যিনি ৫ আগস্টের পর ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হন। তামিম এটা মানতে পারেননি। তিনি নির্বাচন বর্জন করে বিদেশে চলে যান।
এদিকে বিএনপি সমর্থিত সংগঠকরা সংগ্রাম করে যাচ্ছেন শেষ পর্যন্ত। এর মধ্যেই ভোট নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। সোমবারের নির্বাচনের ভোট নাকি ৯৫ ভাগ হয়ে গেছে শুক্রবার রাতে। তা হলে আজ শুধুই কি লোক দেখানো নির্বাচন হবে। ই-মেইলের মাধ্যমে এই ভোট হয়েছে বলে তথ্য এসেছে। বিসিবির নির্বাচন কমিশনই বলেছে, ই-ব্যালট ভোট। ২৬ জন ভোটার এদিন ভোট দিয়েছেন। লুৎফর রহমান বাদল যিনি লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের মালিক, তিনিও খুদে বার্তা পান। অবশ্য হোটেলে ভোট দিতে এসে গোপনে চলেও যান। তাকে জানানো হয় আপনি ভোট দিতে পারছেন না। তিনি বের হয়ে এসে জানান, বিশেষ কারণে সরে দাঁড়িয়েছেন ভোট থেকে।
জানা গেছে, ভোট যেভাবে হয়েছে সেটি চমকপ্রদ। রাতে ভোটাররা আগে বুঝে নেন কি করবেন। কোথায় কোথায় টিক দিতে হবে শিখিয়ে দেওয়া হয়। একটি গোপন কক্ষে কম্পিউটার ও স্ক্যানার নিয়ে একজন অপেক্ষায় ছিলেন। ব্যালেট ই-মেইলে আসছে। সেটা প্রিন্ট করে বলে দেওয়া হয় কোথায় কোথায় ভোট দেবেন। ভোট দেওয়া শেষে ফিলআপ করা লিস্ট স্ক্যান করে কমিশনারের মেইলে পাঠানো হয়। ভোট গ্রহণ এভাবে শেষ হয়।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এ রাতে ক্যাটাগরি-২-এর ভোটাররাই ছিলেন বেশি। এখন কারা বিসিবি পরিচালক হচ্ছেন সেটাও নিশ্চিত হয়ে গেছে বলে জানা যাচ্ছে। আবার গতকাল যারা ই-ভোট দিয়েছেন, তাদের আবার নতুন করে ভোট দেওয়ার জন্য যোগযোগ করা হয়। যোগাযোগের এই কাজটি আবার নির্বাচন কমিশনের হয়ে দুইজন হেভিওয়েট প্রার্থী করছেন।
গতকাল নাটকীয়তা ছিল আরও এক জায়গায়। আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদুয়ান জামালপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর হিসেবে ঢাকা বিভাগের পরিচালক পদে মনোনয়ন নিয়েছিলেন। রেদুয়ান ছাড়াও ঢাকা বিভাগ থেকে পরিচালক পদে প্রার্থিতায় রয়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম। রেদুয়ান সরে দাঁড়ানোয় কার্যত পরিচালক পদের দুটি কোটায় নির্বাচিত হয়েছেন বুলবুল-ফাহিম।
রেদুয়ান গতকাল সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, রাতের ভোটকে হার মানিয়েছে বিসিবির ভোট। ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার প্রার্থী হওয়া আমিনুল ইসলাম বুলবুলের উচিত হয়নি। তিনি কখনোই ঢাকা বিভাগের কোনো জেলারই সদস্য ছিলেন না। এখানকার কোনো ক্রিকেট নিয়েও কাজ করেননি। আমি চ্যালেঞ্জ করতে পারি। আপনারা যদি দেখাইতে পারেন অতীতে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে কোনো জেলার একটা ক্রিকেট নিয়ে উনি একদিন ঢাকা বিভাগে মতবিনিময় করেছেন, যা বলবেন তাই মেনে নেব।
বিসিবিতে পরিচালক হতে পারেন যারা- ফারুক আহমেদ, ইসতিয়াক সাদেক, আদনান রহমান দীপন, ফায়াজুর রহমান, আবুল বাশার, আমজাদ হোসেন, শাহনিয়ান তানিম, মোহাম্মদ মুকছেদুল কামাল, মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান ভূঞা, এম নাজমুল ইসলাম, মো. মনজুর আলম, মেহরাব আলম চৌধুরী।