শেয়ারবাজারে প্রতারণার নতুন ফাঁদ
শেয়ারবাজারে অভিনব ফাঁদ এঁটে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে এক শ্রেণির অসাধুচক্র। তারা সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম এবং ভুয়া ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপে ঝকঝকে বিজ্ঞাপন দিয়ে অল্প সময়ে শেয়ারবাজারে বড় মুনাফার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। প্রথমে তারা বিজ্ঞাপনের ফাঁদে ফেলে বিনিয়োগকারীদের নিয়ে যায় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। সেখানে সাজানো প্রশংসা আর তথাকথিত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ দেয়। এরপর ভুয়া ওয়েবসাইট বা অ্যাপে নিবন্ধন করিয়ে শেষ ধাপে বিকাশ বা নগদে টাকা পাঠাতে বলে। এরই মধ্যে অনেকেই এই চক্রের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হয়েছেন। প্রতারকচক্রের এ ধরনের ফাঁদ থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে বিএসইসিকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, এটি সম্পূর্ণ বেআইনি। নানাভাবে ফাঁদে ফেলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ফতুর করতে বিভিন্ন চক্র এ ধরনের কাজ করছে। এটি শুধু শেয়ারবাজারেই নয়, সমবায় সমিতির নামেও করা হয়। এ জন্য বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি বিএসইসিকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) আসাদুর রহমান বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জের লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার ও মোবাইল অ্যাপস ছাড়া শেয়ারবাজারে লেনদেন করার কোনো সুযোগ নেই। তাই কারও প্রলোভনে পড়ে অন্য কোনোভাবে লেনদেন না করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি। তিনি জানান, একটি চক্র হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের লোগো এবং ঠিকানা ব্যবহার করছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
সম্প্রতি প্রতারণায় জড়িত নারায়ণগঞ্জভিত্তিক এমন একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপকে শনাক্ত করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। দ্রুত মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে চক্রটি অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণা রোধে খিলক্ষেত থানায় গত ৩ আগস্ট অভিযোগ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। এ ছাড়া সচেতন করার জন্য সব স্টেকহোল্ডারদের এবং ডিএসই ভবনে সব অফিসকে চিঠি দিয়েছে ডিএসই। পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে বিএসইসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতারকচক্রটি গ্রুপে সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেড (সিবিএল) ও ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের মতো বৈধ প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করছে। বিনিয়োগকারীদের এমন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিচ্ছে, যেন পুরোটাই বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- গত সেপ্টেম্বর মাসে অন্তত ১৫টি ফেসবুক পেজ থেকে শত শত বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। এসব বিজ্ঞাপন প্রচারের লক্ষ্য ছিল ব্যবহারকারীদের নতুন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নিয়ে আসা। এমন অন্তত ২০টি গ্রুপ চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি। সিবিএলের নাম ব্যবহার করা গ্রুপে সদস্যদের একটি ভুয়া অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলা হয়। আর ব্র্যাক গ্রুপের সদস্যদের নিয়ে যাওয়া হয় একটি ভুয়া ওয়েবসাইটে, যা দেখলে হুবহু আসল ওয়েবসাইটই মনে হয়। এরপর তাদের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্রোকারেজ চ্যানেল এড়িয়ে এমএফএস বা ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে বলা হয়। বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে কোনো কোনো বিজ্ঞাপনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনের মতো বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তির ছবি এবং পরিচয় ব্যবহার করা হচ্ছে।
ব্র্যাক ইপিএলের প্রধান নির্বাহী আহসানুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এরই মধ্যে সিআইডি, বিএসইসি, বিটিআরসিকে জানানো হয়েছে। সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। আর বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করতে ই-মেইল, হোয়াটসঅ্যাপে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সতর্কতার বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম