কক্সবাজারে বিজয়া উৎসবে ‘ফিলিস্তিন হোক মুক্ত’ স্লোগান

অনলাইন ডেস্ক
০৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৪৫
শেয়ার :
কক্সবাজারে বিজয়া উৎসবে ‘ফিলিস্তিন হোক মুক্ত’ স্লোগান

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিজয়া দশমীর ঢাক-ঢোল, শঙ্খধ্বনির পাশাপাশি মানুষের উল্লাসের মাঝেই হঠাৎ করে ভেসে ওঠে মানবতার স্লোগান— ‘ফিলিস্তিন হোক মুক্ত’।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে কক্সবাজার সৈকতের কবিতা চত্বর থেকে কলাতলি বিচ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার লোকে-লোকারণ্য হয়ে উঠে। বিশেষ করে লাবনী, সুগন্ধা ও কলাতলি পয়েন্টে লাখো মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।

মানুষের ভিড়ে বালুকাবেলায় দাঁড়িয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অরূপ শর্মা বলেন, ‘আমরা আজ দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাচ্ছি। কিন্তু মানবতার সংগ্রাম চিরন্তন। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ মানুষদের মুক্তি ও শান্তি কামনাই আমাদের আজকের প্রার্থনা।’

পরিষদের সভাপতি উদয় শঙ্কর পাল জানান, এবারের দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলো। তবে এবারের বিদায় কেবল উৎসব নয়, মানবিক মূল্যবোধেরও প্রকাশ ঘটিয়েছে। আমরা সবাই ফিলিস্তিনের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছি।

এসময় সৈকতের বালুচরে একদল তরুণ-তরুণী হাতে প্ল্যাকার্ড উঁচিয়ে ধরেন। তাতে লেখা— ‘Stop Genocide in Gaza’, ‘Stand for Palestine’, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’

কলেজশিক্ষার্থী অতসী দে বলেন, ‘বিজয়ার আনন্দের সঙ্গে আমরা শান্তির আহ্বান যুক্ত করেছি। আমরা চাই, ফিলিস্তিনের মানুষ যেন মুক্তভাবে বাঁচতে পারে।’

স্থানীয় যুবক আবদুর রশিদ মানিক বলেন, ‘আজকের দিন প্রমাণ করেছে মানবতার প্রশ্নে ধর্ম-বর্ণ কোনো ভেদাভেদ নেই। বিজয়ার আনন্দকে আমরা ফিলিস্তিনের মুক্তির প্রার্থনায় মিলিয়ে দিয়েছি।’

রামু থেকে আসা পুণ্যার্থী সীমা দত্ত বলেন, ‘বিজয়ার দিনটা এবার ভিন্নভাবে ছুঁয়ে গেল। সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে ফিলিস্তিন মুক্তির আহ্বান শুনে মনে হলো মানবতার শক্তি সমুদ্রকেও কাঁপিয়ে তুলছে।’

স্থানীয় দর্শনার্থী মহিউদ্দিন হাসান বলেন, ‘আমি মুসলিম হয়েও বিজয়া দশমীর এই দৃশ্যে উপস্থিত থাকতে গর্ববোধ করেছি। এখানে নেই কোনো বিভেদ, আছে শুধু ভালোবাসা আর সম্প্রীতি।’

কক্সবাজার অঞ্চলের ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিআইজি) আপেল মাহমুদ জানান, ‘প্রায় ৫ শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল। সেনাবাহিনী, র্যাব ও ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে কাজ করছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেওয়া হয়নি।’

বিজয়ার মঞ্চে জেলা প্রশাসকসহ রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন। সবাই একসঙ্গে বলেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’ 

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এবারের দুর্গোৎসব জেলায় ৩১৭টি পূজামণ্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আর সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জনের সঙ্গে প্রতিধ্বনিত হয়েছে বিদায়ের স্লোগান— ‘ফিলিস্তিন হোক মুক্ত।’