বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের হামলায় ব্যবসায়ী নিহত
‘স্বামীরে থুইয়া আমি কেমনে থাকুমরে’ বলে আহাজারি করছিলেন নিহত আব্দুল হারুনের স্ত্রী শিমু আক্তার। ম্যান পাওয়ারের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালী ইউনিয়নের জাহানাবাদ এলাকার হারুনকে হত্যার উদ্দেশে কুপিয়ে আহত করেন দুর্বৃত্তরা বলে দাবি পরিবারের।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার হেলথকেয়ার হাসপাতালের আইসিওতে ১৭ ঘণ্টা চিকিৎসাধীন থাকার পর হারুনের মৃত্যু হয়। এর আগে গত ১৮ নভেম্বার ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে হারুনকে কুপিয়ে ফেলে যান দুর্বৃত্তরা।
নিহতের ছোট মেয়ে সানজিদা আক্তার আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমার মা দীর্ঘদিন ধরে লিভারের সমস্যায় ভুগছেন। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। গত ১৮ নভেম্বর সকালে আমার বাবা হাসপাতালে মায়ের চিকিৎসার রিপোর্ট দেখানোর জন্য ঢাকায় যান। তার ফিরতে রাত হয়। রাত ৮টার দিকে বাবা ছোট কাউনিয়া কান্দি এলাকায় সুলতানের বাড়ি হয়ে আমাদের বাড়িতে আসার পথে পরিকল্পিতভাবে ৬-৭ জন লোক আমার বাবাকে রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। পরে বাবার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে আমাদের খবর দেন। আমরা গিয়ে বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
নিহতের পরিবার জানায়, আহত হারুনকে প্রথমে নবাবগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অবস্থার অবনতি দেখে তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠান। সেখানে দুদিন চিকিৎসা শেষে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুনরায় ভর্তি করা হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিন দিন চিকিৎসা দিলে অবস্থার আরও অবনতি হলে মঙ্গলবার রাতে তাকে হেলথ কেয়ার হসপিটালের আইসিওতে ভর্তি করা হয়। আইসিওতে প্রায় ১৭ ঘণ্টা চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান।
নিহতের ছেলে তানভির বলেন, ‘আমার বাবা প্রায় ৩০ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে এলাকায় ম্যান পাওয়ারের ব্যবসা করে আসছেন। অনেক লোককে তিনি বিদেশ পাঠিয়েছেন। তারা প্রবাসে অনেক ভালো অবস্থায় আছেন। কিন্তু গত দুই মাস আগে ছোট কাউনিয়াকান্দি এলাকার ফাহাদকে আমার বাবা ইলেক্ট্রিশিয়ান কাজে সৌদি আরব পাঠান। সেখানে তিনি ইন্টারভিউতে টেকেনি। তাই তাকে ইলেক্ট্রিশিয়ান হেল্পারের কাজ দেওয়া হয়। এতে আবু তাহের ও তার ছেলে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বাবাকে হুমকি ধামকি দেন। এমন কি বাজারে সবার সামনে গায়ে হাত তোলেন। পরে বিষয়টি স্থানীয় মুরব্বিদের জানালে তারা সমাধান করে দেন। এ সময় বাবা কাজ পরিবর্তনের জন্য ১৫ দিনের সময় নেন। কিন্তু দুই দিন যেতে না যেতেই আবু তাহের (৫৫) তার ছেলে রাতুলসহ (১৯) নাম না জানা আরও তিন-চার জন আমার বাবাকে হত্যার উদ্দেশে রড, লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন।’
এ ঘটনায় নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম শেখ আমাদের সময়কে বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হবে। যারা জড়িত তাদের সকলকে গ্রেপ্তার করে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হবে।