দুই পরিকল্পনা সামনে রেখে এগোচ্ছে বাম দলগুলো
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্য নামের দলগুলো দুই রকম পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগোচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিজেদের মধ্যে আসন সমঝোতার পাশাপাশি বিএনপিসহ অন্য দলের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা অব্যাহত আছে গণতন্ত্র মঞ্চের। অন্যদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিকদের মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে। একই সঙ্গে বাম দলগুলোর মধ্যে বলয় বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে তাদের। বাম দলের বাইরে বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার ভাবনা আপাতত নেই বাম জোটের।
জানা গেছে, আগামী ৪ অক্টোবর গণতন্ত্র মঞ্চের মধ্যে সমকালীন রাজনীতি ও আগামী নির্বাচন ইস্যুতে বৈঠক হবে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির নীতি-নির্ধারণীয় পর্যায়ে আলোচনা করবে তারা। অন্যদিকে দুর্গাপূজার ছুটির পর একে একে বাম দলগুলোর মধ্যে আলোচনায় বসবে বাম গণতান্ত্রিক জোট। তবে রাজনৈতিক সমঝোতার পুরো চিত্র বোঝা যাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর।
জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আমাদের সময়কে বলেন, ৪ অক্টোবর আমরা গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকরা বৈঠক করব। বৈঠকের সিদ্ধান্তের পর বিএনপিসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা করব। তিনি বলেন, এর মধ্যে আসন বণ্টনবিষয়ক আলোচনা থাকবে। যেহেতু আমরা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম, আছি। তাই বিএনপিই হবে আমাদের ফার্স্ট প্রায়োরিটি।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গণতন্ত্র মঞ্চের আরেক শরিক নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না আমাদের সময়কে বলেন, আগামী চার তারিখের বৈঠক আসলে সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে। নির্বাচনটা কীভাবে হবে, এর ওপর নির্ভর করছে, আমরা জোটবদ্ধভাবে অংশ নেব, নাকি অন্য কোনোভাবে। তিনি জানান, যেহেতু যুগপৎ লড়াইয়ে ছিলেন, ফলে ভোটের আলোচনা বিএনপির সঙ্গে হতেই পারে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, আসন বণ্টন বা সমঝোতা নিয়ে এখনও কোনো কথা হয়নি। আমরা জোটগতভাবে আমাদের প্রস্তুতিটা নিচ্ছি। খুব তাড়াতাড়ি অর্থাৎ পূজার ছুটির পরই আমরা বসব। কার কার সঙ্গে আমরা আলোচনা করতে পারি, সেগুলো নিয়েও কথা বলব।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির সাথে ভোটের ব্যাপারে আলোচনা হওয়ার ভাবনা আপাতত নেই। তাছাড়া বিএনপির দিক থেকেও আমাদের সঙ্গে আলোচনার কোনো প্রস্তাব নেই। তিনি বলেন, আগে তফসিল ঘোষণা হোক। এরও আগে আমরা নিজেদের প্রস্তুতিটা নিই। নিজের প্রস্তুতি থাকলে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করা যায়। নিজেদের প্রস্তুতি না থাকলে কী নিয়ে কথা বলব?
এর আগে, বাম জোট ও গণতন্ত্র মঞ্চের আলোচনায় কিছুটা গতি পেয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবির) নতুন নেতৃত্ব আসার পর। এরই মধ্যে সিপিবির নেতাদের সঙ্গে বামদলগুলোর দুই দফা বৈঠক হয়ে গেছে। এসব বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্যের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনী পরিকল্পনা নিয়েও কথা হয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিপিবি বা বাম জোটের টার্গেট বাম বলয় বৃদ্ধি করা। বাম বলয় বৃদ্ধি ও দক্ষিণপন্থি রাজনীতির উত্থানের বিপরীতে আগামী ১৪ নভেম্বর সমাবেশ করবে সিপিবি। এ সমাবেশে বাম দল ও প্রগতিশীল চিন্তার মানুষকে এক মঞ্চে তোলার উদ্যোগও রয়েছে তাদের।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
এদিকে গণতন্ত্র মঞ্চের ইচ্ছা বাম ও বিএনপি উভয়ের রসায়ন রক্ষা করে এগিয়ে যাওয়া এবং পরবর্তী পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া। এ বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সহ-সভাপতি তানিয়া রবের ভাষ্য, নতুন পরিস্থিতিতে নতুন মেরুকরণের গুরুত্ব উপলব্ধি করে আলোচনা শুরু হয়েছে। নতুন বাস্তবতার নিরিখে দলীয় ক্ষমতার বাইরে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে জনগণের অভিপ্রায় পূরণে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।