আন্দোলনে চট্টগ্রাম অচলের হুশিয়ারি

চট্টগ্রাম ব্যুরো
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
আন্দোলনে চট্টগ্রাম অচলের হুশিয়ারি

চট্টগ্রামের ব্যাংকারদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও ইসলামী ব্যাংকে কর্মরত সাড়ে ৫ হাজার ব্যাংকারকে অবৈধভাবে চাকরিচ্যুতির চক্রান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে ব্যাংকটির কর্মকর্তারা। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে ‘চট্টগ্রাম অধিকার আন্দোলন’র ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে তারা এ প্রতিবাদ জানান। এতে চট্টগ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা কর্মকর্তারা অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তারা দাবি করেন, অবিলম্বে ইসলামী ব্যাংকসহ বিনা কারণে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের পুনর্বহাল করতে হবে। এ দাবি উপেক্ষা করা হলে নাগরিক সমাজকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে পুরো চট্টগ্রাম অচল করে দেওয়া হবে বলেও হুশিয়ার দেওয়া হয়। এদিকে, ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রবিবার রাতে এনসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার যুগ্ম সমন্বয়কারী আরিফ মঈনুদ্দিনের পাঠানো এক বিবৃতিতে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তাঁদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি- সম্প্রতি একটি বিশেষ মহল ইসলামী ব্যাংকের ৫ হাজার ৪৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একযোগে চাকরিচ্যুত করার অন্যায় প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ প্রচেষ্টা শুধু অনৈতিকই নয়, চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের প্রতি গভীর বৈষম্যমূলক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।

আমরা লক্ষ্য করেছি, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনে নিয়োগপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মচারীদের একটি গোষ্ঠীভিত্তিকভাবে টার্গেট করে চাকরিচ্যুত করার পাঁয়তারা চলছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

দেশের বেসরকারি আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক আওয়ামী লীগ সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি নিয়ন্ত্রণে নেয় এস আলম গ্রুপ, যেটি আগে রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্টদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক আগের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে ইসলামী ব্যাংককে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে।

নতুন পর্ষদ আসার পর গত শনিবার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কর্মকর্তার বিশেষ সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেয় ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক বলে জানানো হয়। কিন্তু পরীক্ষার জন্য মনোনীতদের অভিযোগ, ব্যাংকে ওই পদগুলোয় প্রায় ৮ হাজারের মতো কর্মকর্তা থাকলেও কেবল ২০১৭ সালের পর নিয়োগপ্রাপ্তদের পরীক্ষা জন্য সার্কুলার দেওয়া হয়েছে।

এই পরীক্ষার আড়ালে ব্যাংকটিতে কর্মরত চট্টগ্রামের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কর্মকর্তাকে ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনার অভিযোগ করেন তারা। এ অবস্থায় সাড়ে ৫ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে প্রায় শতভাগ বিশেষ সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা বর্জন করে।

এরপর সপ্তাহের কর্মদিবস শুরুর প্রথম দিনে রবিবার সকাল থেকে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ইসলামী ব্যাংকের কয়েকটি শাখায় ব্যাপক উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়। সকালে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার পৌর সদরে ইসলামী ব্যাংকের শাখা কার্যালয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে দিনভর কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ লাটিচার্জ করে বিক্ষুদ্ধ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেয়।