উইন্ডিজকে হারিয়ে নেপালের ইতিহাস
শারজায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৯ রানে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল নেপাল। এবারই প্রথমবারের মতো কোনো আইসিসির পূর্ণ সদস্য দলের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জয় পেল তারা। এর আগে ২০১৪ সালে আফগানিস্তানকে টি-টোয়েন্টিতে হারালেও তখন আফগানরা ছিল সহযোগী সদস্য।
শুধু জয় নয় এ দিনটি নেপালের ক্রিকেটের জন্য ঐতিহাসিক। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটিই ছিল তাদের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ, একইসঙ্গে প্রথম কোনো পূর্ণ সদস্য দলের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের সূচনা। আর সেই মঞ্চকেই স্মরণীয় করে রাখল রোহিত পাউডেলরা।
দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—সব বিভাগেই ছাপিয়ে গেছেন তারা। দলের ছয় ব্যাটসম্যান ছক্কা হাঁকিয়েছেন, ছয় বোলার নিয়েছেন অন্তত একটি করে উইকেট, আর ফিল্ডিং ছিল অনন্য।
টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক আকিল হোসেইন ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। শুরুটা ভালো হয়নি নেপালের—৩.১ ওভারেই দুই ওপেনার ফিরেছিলেন। কুশল ভুর্তেলকে আর্ম বল দিয়ে স্টাম্পিং করান হোসেইন, আর আসিফ শেখ জেসন হোল্ডারের বলে লফট করতে গিয়ে ধরা পড়েন মিড-অনে।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভার পর্যন্ত মাত্র দুইটি বাউন্ডারি পায় নেপাল। ষষ্ঠ ওভারে নবাগত রামন সিমন্ডসকে পরপর দুটি চার মারেন অধিনায়ক রোহিত পাউডেল। তবে আসল গতি এনে দেন কুশল মাল্লা। ফাবিয়ান অ্যালেনকে চার মারার পর তার পরের ওভারে উড়িয়ে মারেন প্রথম ছক্কা। পরে ওবেড ম্যাককয়ের বলেও ছক্কা হাঁকান তিনি।
১০ ওভারে নেপালের সংগ্রহ ছিল ৬৮/২। মাল্লা ও পাউডেল মিলে ৪৫ বলে ৫৮ রান তোলেন। কিন্তু দুজনই উইকেট দেন অভিষিক্ত লেগ স্পিনার নাভিন বিদাইসিকে। এরপর গুলসান ঝা ও দিপেন্দ্র সিং আইরি কিছুটা গতি ধরে রাখলেও বিদাইসি ফের আঘাত হানেন, চার ওভারে ২৯ রানে নেন ৩ উইকেট। শেষদিকে হোল্ডারও এক ওভারে তিন উইকেট নেন। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফিল্ডারদের ক্যাচ মিসের সুবিধায় লড়াই করার মতো ১৪৮/৮ তুলতে সক্ষম হয় নেপাল।
জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা আশাব্যঞ্জক হলেও খুব দ্রুত ভেঙে পড়ে। কাইল মায়ার্স প্রথম বলেই চার মেরেছিলেন, কিন্তু পরের ওভারে ভুর্তেলের সরাসরি থ্রোতে রান আউট হয়ে যান। অভিষিক্ত আকিম অগাস্ট দুটো ছক্কা মারলেও পাওয়ার প্লের মধ্যেই তিনি ফেরেন।
৬ ওভারে ক্যারিবীয়দের সংগ্রহ ছিল ৪০/২। এরপর নেপালি স্পিনাররা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। পরের চার ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচ করে তুলে নেন দুটি উইকেট।
শেষ দশ ওভারে ৯৩ রান তোলা প্রয়োজন ছিল ক্যারিবীয়দের, কিন্তু ধীর পিচে শট খেলা কঠিন হয়ে পড়েছিল। আইরির দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে রান আউট হন কেসি কার্টি। ভরসা ছিল হোল্ডারের ওপর, কিন্তু তিনি মাত্র ৫ রান করে ভুর্তেলের বলে ধরা পড়েন ডিপ মিডউইকেটে।
বিদাইসি, অ্যালেন আর হোসেইন চেষ্টা করেছিলেন বড় শটে ম্যাচ ফেরানোর, কিন্তু রানের চাপ সামলাতে পারেননি। শেষ পাঁচ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৭০ রান, শেষ তিন ওভারে ৪৯।
১৮তম ওভারে নেপালের নিখুঁত ফিল্ডিংয়ে সামান্য ফাঁক দেখা দেয়—টানা দুই বলে হোসেইনের দুটি ক্যাচ ফেলেন তারা। প্রথমটি চার, দ্বিতীয়টি ছক্কায় গড়ায়। তবে পরের ওভারেই করণ কে.সি. তাকে ফিরিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত ২০তম ওভারে অ্যালেনের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮ রান, যা তুলতে ব্যর্থ হন তিনি।
ইতিহাস গড়ে তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমবারের মতো হারাল নেপাল।