আয়ারল্যান্ড : মানসম্মত শিক্ষা ও ক্যারিয়ার সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
আয়ারল্যান্ড : মানসম্মত শিক্ষা ও ক্যারিয়ার সম্ভাবনা

উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত দেশ আয়ারল্যান্ড। বর্তমানে উচ্চশিক্ষার জন্য আয়ারল্যান্ড দেশটি শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কারণ চাকরির বাজার পড়াশোনার খরচ, বৃত্তিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করছে। আয়ারল্যান্ডের উচ্চশিক্ষা নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো আজকের আয়োজনে।

আয়ারল্যান্ডে কেন পড়তে যাবেন

ইউরোপের অন্যতম ধনী দেশ আয়ারল্যান্ড। বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থী এখন পাড়ি জমাচ্ছেন আয়ারল্যান্ডে। দেশটির অফিশিয়াল নাম ‘রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড’ আর অফিশিয়াল ভাষা আইরিশ ও ইংরেজি। দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী হলো ডাবলিন। ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উৎকর্ষে অবস্থিত এই দেশের মুদ্রা ইউরো। এই দেশ মূলত শীতপ্রধান এবং এই দেশের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। আয়ারল্যান্ডের আয়তন ৭০,২৭৩ বর্গকিমি. আর লোকসংখ্যা প্রায় ৫,৩০,০০০০। আয়ারল্যান্ড সেনজেনভুক্ত দেশ নয়। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উচ্চশিক্ষার আশায় চলে শিক্ষার্থীরা আসছেন আয়ারল্যান্ডে। এ দেশের অন্যতম অফিশিয়াল ভাষা ইংরেজি হওয়ায় অনেক কোর্স রয়েছে ইংরেজি ভাষায়। এ দেশে ব্যাচেলর ডিগ্রি সাধারণত ৩-৪ বছরের হয়ে থাকে, মাস্টার্স ১.৫-২ বছর এবং ডক্টরেট ৩-৪ বছরের হয়ে থাকে। তাই আপনার জন্যও হতে পারে এই দেশ বিদ্যাশিক্ষার অনন্য স্থান।

কোর্স ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন

আয়ারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো World Ranking-এর তালিকায় ওপরের দিকে অবস্থিত হওয়ায় অনেকেই এ দেশে পড়াশোনা ও উচ্চশিক্ষার জন্য আসতে চান। এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জনপ্রিয় কিছু কোর্স :

অ্যাকাউন্টিং, অ্যাগ্রিকালচার, অ্যানাটমি, অ্যাপ্লায়েড ম্যাথমেটিকস, আর্কিটেকচার, ডিজাইন, আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ, অডিও ইঞ্জিনিয়ারিং, অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ারিং, এভিয়েশন স্টাডিজ, ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্স, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্স, বায়োমেডিক্যাল সায়েন্স, বায়োটেকনোলজি, সিরামিকস, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া, ডান্স, ড্রামা, ই-কর্মাস, ইকোনমিকস, একাউনট্যান্সি, এবরোজিনাল অ্যান্ড ইনডিজেনাস স্টাডি, অল্টারনেটিভ মেডিসিন, এনথ্রোপলজি, অ্যাপ্লায়েড ম্যাথমেটিকস, অ্যাকুয়াকালচার, কেমিস্ট্রি, এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ, বিজনেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করা যায়।

কয়েকটি জনপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়

ডাবলিন সিটি ইউনিভার্সিটি

ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব অ্যায়ারল্যান্ড

ট্রিনিটি কলেজ, ডাবলিন

ইউনিভার্সিটি কলেজ, ডাবলিন

রকওয়েল কলেজ

গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটি অ্যাথোলেন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি

আয়ারল্যান্ডে পড়তে যাওয়ার জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা

আয়ারল্যান্ডে বছরে দুটি সেমিস্টার পড়ানো হয়। একটি ফল সেমিস্টার, অপরটি স্প্রিং সেমিস্টার। ফল সেমিস্টার চলে আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আর স্প্রিং সেমিস্টার চলে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত।

ব্যাচেলর প্রোগ্রামে যদি এ দেশে পড়তে চান তাহলে আপনার থাকতে হবে ১২ বছরের শিক্ষাজীবন অর্থাৎ এইচএসসি পাস হতে হবে। আর আপনাকে IELTS-এ ৫.৫ থেকে ৬.০ পয়েন্ট পেতে হবে অথবা TOEFL-এর CBT-তে ২১৩ বা IBT-তে ৭৯ থেকে ৮০ পয়েন্ট হতে হবে। অন্যদিকে আপনি যদি মাস্টার্স প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে চান তাহলে আপনার থাকতে হবে ১৬ বছরের শিক্ষাজীবন, অর্থাৎ আপনাকে শেষ করতে হবে ব্যাচেলর ডিগ্রি এবং আপনাকে IELTS-এ ৬ থেকে ৬.৫ পয়েন্ট পেতে হবে অথবা TOEFL-এর CBT-তে ২১৩ থেকে ২৩৭ বা IBT-তে ৭৯ থেকে ৯৩ পয়েন্ট থাকতে হবে। আপনার GRE/GMAT প্রয়োজন হবে কিনা সেটা নির্ভর করবে আপনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছেন তার ওপর।


ইউনিভার্সিটিতে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজসমূহ

সব একাডেমিক ডকুমেন্টস ও মার্কশিট

পাসপোর্ট/জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি

অ্যাপ্লিকেশন ফরম

আইইএলটিএসের সার্টিফিকেট

অ্যাপ্লিকেশন ফি পরিশোধের প্রমাণ কপি

আয়ারল্যান্ডে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন ফি বিভিন্ন রকমের। সাধারণত এই ফি ৪৫ থেকে ৯০ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে। আবেদন করার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবেদন যাচাই-বাছাই করে এবং যোগ্য শিক্ষার্থীদের আয়ারল্যান্ডে পড়াশোনা করার সুযোগ দিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনার আবেদনকে যথার্থ মনে করলে তারা সরাসরি আপনাকে Offer Letter পাঠিয়ে দিতে দেরি করবে না।

পড়াশোনার খরচ (টিউশন ফি) ও স্কলারশিপ

আয়ারল্যান্ডে ব্যাচেলর ডিগ্রির ক্ষেত্রে বছরে ১০ হাজার ৫০০ থেকে ১৫ হাজার ১৫০ ইউরো এবং মাস্টার ডিগ্রির ক্ষেত্রে সাত হাজার ৪০০ থেকে ১৫ হাজার ৭২০ ইউরো টিউশন ফি লাগে। তবে কলেজে পড়াশোনা করতে প্রায় ৩০ শতাংশ খরচ কম হয়। প্রতি মাসে ৩০০ থেকে ৫০০ ইউরো দিয়েই অনায়াসে থাকা, খাওয়া, যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ মেটাতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। আয়ারল্যান্ডে ব্যাচেলর লেভেলে স্কলারশিপের সুযোগ ক্ষীণ। কিন্তু মাস্টার্স প্রোগ্রামে স্কলারশিপের সযোগ তুলনামূলক বেশি। আয়ারল্যান্ডে ন্যাশনাল স্কলারশিপ প্রোগ্রামের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও স্কলারশিপ পাওয়া যায়। এ দেশে প্রায় একশর মতো বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ অফার করা হয়ে থাকে।

আয়ারল্যান্ডে আবাসনব্যবস্থা ও জীবনযাপন খরচ

আয়ারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে নিজস্ব আবাসনব্যবস্থা। এই আবাসনব্যবস্থা অনেক উন্নত। কিন্তু বাইরের শেয়ারড অ্যাপার্টমেন্ট থেকে এই আবাসনব্যবস্থা কিছুটা ব্যয়বহুল। তাই অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে থাকেন। জীবনযাত্রার খরচ হিসাব করতে বসলে, আয়ারল্যান্ড অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর অনুরূপ- বেশ খানিকটা ব্যয়বহুল। তবে আপনি যদি বড় শহরে বাস করেন, তাহলে আপনার খরচ বেশি হবে। অন্যদিকে আপনি যদি ছোট শহরে বসবাস করেন তাহলে ব্যয় বেশ খানিকটা কমে যাবে। এ দেশে আপনাকে প্রতি মাসে জীবনধারণের জন্য ৫০০ থেকে ৮০০ ইউরো খরচ করতে হতে পারে। আর শিক্ষার্থীদের জন্য অন্য একটি ব্যয় হলো স্বাস্থ্যবীমা।

আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণ

আয়ারল্যান্ডে ভিসাপ্রাপ্তির জন্য আপনাকে ব্যাংকে প্রায় ১০,০০০ ইউরো দেখাতে হবে। আর যদি আপনার খরচ বহন করে অন্য কোনো স্পন্সর, তাহলে তাকে নোটারাইজড অঙ্গীকারনামা দিতে হবে যে তিনি আপনার সব খরচ বহন করবে। তার জন্য প্রয়োজন পড়বে আপনার স্পন্সরের ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।

ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া

আয়ারল্যান্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর আপনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবেন একটি Offer Letter. এই Offer Letter পাওয়ার পর আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু আয়ারল্যান্ডের এম্বাসি বাংলাদেশে নেই। তাই আপনাকে যোগাযোগ করতে হবে দিল্লির আয়ারল্যান্ড এম্বাসির সঙ্গে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা

পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফরম

পাসপোর্ট ও ফটোগ্রাফ

CV, Statement of Purpose (SOP) ও রেফারেন্স

সব মার্কশিট ও সনদ, IELTS-GRE সনদ

No Objection Certificate [শেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে]

অফার লেটার

ব্যাংক সলভেন্সি পেপার

৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স

হেলথ ইন্স্যুরেন্স, মেডিক্যাল রিপোর্ট ইত্যাদি


পার্ট টাইম জব ও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ

আয়ারল্যান্ডে আপনি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা জব করার সুযোগ পাবেন। আর আপনি সামারে সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা জব করার সুযোগ পাবেন। রেস্টুরেন্ট, দোকান, শপিং মলে কাজ করে ঘণ্টায় ৭ থেকে ১২ ইউরো পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। আয়ারল্যান্ডে আপনি পার্ট টাইম জব করার সুযোগ পাবেন, কিন্তু এই পার্ট টাইম জব করে পুরো টিউশন ফি জোগাড় করা সম্ভব হয়ে উঠবে না। আর ৫ বছর আয়ারল্যান্ডে বৈধভাবে বসবাস করলে আপনি আবেদন করতে পারবেন PR-এর জন্য। আয়ারল্যান্ড ইউরোপের পশ্চিম উপকূলের অন্যতম সুন্দর দেশ। আপনি এ দেশে অনেক সুবিধা পাবেন। হয়তো আয়ারল্যান্ড আপনার জন্য উন্মোচন করবে সুন্দর ভবিষ্যতের অনেক সম্ভাবনা।

আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

সাধারণত ফল সেমিস্টারে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ভর্তি হন আয়ারল্যান্ডে। স্প্রিং সেমিস্টারে কোনো কোনো কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্প পরিমাণে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। আবেদন করতে আপনাকে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভর্তি শাখা’ বরাবর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফিসহ আবেদনপত্র পাঠাতে হবে।