জরুরি মুহূর্তে জীবন বাঁচাবে সিপিআর
অনেক সময় আকস্মিকভাবে কেউ জ্ঞান হারালে বা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসা না পেলে তার মৃত্যু হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক ও কার্যকর একটি পদ্ধতি প্রয়োগ করা গেলে হয়তো জীবনটি রক্ষা করা সম্ভব। পদ্ধতিটির নাম সিপিআর (কার্ডিও-পালমোনারি রিসাসিটেশন)। এর অর্থ হৃদযন্ত্র ও শ্বাসতন্ত্র পুনরুজ্জীবন।
সিপিআর শেখা জরুরি। কারণ জীবন ও মৃত্যুর মধ্যকার ব্যবধান মাত্র ৫-৭ মিনিট। এই স্বল্প সময়ে সিপিআর প্রয়োগ করা হলে শরীরের রক্ত ও অক্সিজেন চলাচল বজায় থাকে, যা মস্তিষ্ক ও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো সচল রাখতে সহায়তা করে। চিকিৎসক এসে পৌঁছানোর আগেই একজন সাধারণ মানুষ হয়ে উঠতে পারেন জীবনরক্ষক। বিশ্বের বহু দেশে বিদ্যালয় পর্যায় থেকেই সিপিআর শেখানো হয়। আমাদের দেশেও এ বিষয়ে সচেতনতা জরুরি।
সিপিআর যখন প্রয়োজন : কেউ হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেলে, শ্বাস-প্রশ্বাস বা হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলে, পানিতে ডুবে গেলে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে কিংবা দুর্ঘটনায় গুরুতর আঘাত পেলে সিপিআরের প্রয়োজন হতে পারে।
প্রয়োগ পদ্ধতি : প্রথমেই পরিবেশ পরীক্ষা করুন এবং নিশ্চিত হোন, আপনি ও আক্রান্ত ব্যক্তি- উভয়ে নিরাপদ স্থানে আছেন। আশপাশে আগুন, বিদ্যুৎ, গ্যাস লিক বা যানবাহনের ঝুঁকি থাকলে আগে নিরাপদ স্থানে চলে যান। এরপর ভুক্তভোগীর জ্ঞান আছে কি না, যাচাই করুন। কাঁধে হাত দিয়ে জোরে বলুন, ‘আপনি কি ঠিক আছেন?’ কোনো সাড়া না পেলে ধরে নিন, তিনি অচেতন। এরপর জরুরি সেবায় (৯৯৯) কল করুন। পাশে কেউ থাকলে তাকে ফোন করতে বলুন এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্র (যেমন- স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক ডিফিব্রিলেটর) আনতে বলুন। আপনি একা থাকলে ফোনের স্পিকার চালু করে সিপিআর শুরু করুন। এরপর ভুক্তভোগীকে চিৎ করে শক্ত সমতল স্থানে শুইয়ে দিন। মাথা পেছনে ঠেলে, চিবুক উঁচু করে শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করুন। মুখ ও নাকের কাছে আপনার মুখ নিয়ে গিয়ে ৮-১০ সেকেন্ড পর্যবেক্ষণ করুন বুক উঠছে কি না, নিঃশ্বাসের শব্দ আছে কি না কিংবা গালে বাতাস লাগছে কি না। শ্বাস-প্রশ্বাস না পেলে সিপিআর শুরু করুন। এটির প্রথম ধাপ হলো বুকে চাপ দেওয়া। আক্রান্ত ব্যক্তির বুকের মাঝ বরাবর দুই হাতের তালু একটার ওপর আরেকটা রেখে চাপ দিন। কনুই সোজা রেখে শরীরের ওজন ব্যবহার করুন। প্রতিমিনিটে ১০০-১২০ বার হারে, বুকের প্রায় ২ ইঞ্চি (৫ সেন্টিমিটার) গভীরে চাপ দিন এবং প্রতিটি চাপের পর বুক স্বাভাবিকভাবে উঠতে দিন। এভাবে ৩০ বার চাপ দিন। এরপর মুখে মুখ দিয়ে শ্বাস দিন। মাথা পেছনে ঠেলে চিবুক উঠিয়ে নাক চেপে ধরুন এবং মুখে মুখ লাগিয়ে ধীরে ধীরে দুবার ফুঁ দিন, প্রতিটি শ্বাস ১ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। শ্বাস দেওয়ার পর দেখুন বুক উঠছে কি না। যদি না ওঠে, তবে মাথার অবস্থান ঠিক করে আবার চেষ্টা করুন। ততক্ষণ করবেন, যতক্ষণ না আক্রান্ত ব্যক্তি সাড়া দিচ্ছেন।
মনে রাখবেন : শিশু বা নবজাতকের ক্ষেত্রে বুকের চাপ তুলনামূলকভাবে হালকা দিতে হয় এবং দুই আঙুল ব্যবহার করতে হয়। যদি মুখে শ্বাস দেওয়া সম্ভব না হয় (সংক্রমণের ঝুঁকি বা অস্বস্তি থাকলে), তাহলে কেবল বুকের চাপ দিয়েও সিপিআর চালিয়ে যাওয়া যায়। যদি স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক ডিফিব্রিলেটর পাওয়া যায়, তাহলে যন্ত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী সেটি ব্যবহার করুন। তাই সিপিআর নিজে শিখুন, অন্যকে শেখান এবং প্রয়োজনে প্রয়োগ করুন।
লেখক : কনসালট্যান্ট, ক্লিনিক্যাল ও হস্তক্ষেপমূলক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
চেম্বার : আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০, ঢাকা
হটলাইন : ১০৬৭২