প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধিতে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে বিদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেনে মিশ্র প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি সামান্য বাড়লেও চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত অবস্থা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। তবে ঘাটতি বেড়েছে আর্থিক হিসাবে। তারপরও সার্বিক ভারসাম্যে ঘাটতি কমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবাসী আয়ে বড় প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারা ও গেল অর্থবছরের শেষ সময়ে বড় অঙ্কের বৈদেশিক ঋণ আসায় দেশে ডলারের প্রবাহ বেড়েছে। ফলে আমদানি বৃদ্ধির পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। ডলারের দামেও স্থিতিশীলতা এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আমাদের সময়কে বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে হুন্ডির চাহিদা কমে বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় অনেক বাড়ছে। সেই সঙ্গে রপ্তানি আয়েও ভালো প্রবৃদ্ধি রয়েছে। ফলে আমদানি বাড়লেও সার্বিক লেনদেন ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আমদানিতে গতি আসায় বাণিজ্য ঘাটতি সামান্য বেড়েছে : কোনো দেশের আমদানি ব্যয়ের তুলনায় রপ্তানি আয়ের যে ব্যবধান সেটিই হলো বাণিজ্য ঘাটতি। বাংলাদেশের রপ্তানির তুলনায় আমদানি ব্যয় বরাবরই বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫৯২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে জুলাই মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ২৭ দশমিক ১০ শতাংশ। যদিও এ মাসে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৪৪২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ফলে এ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে হয়েছে ১৫০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে প্রথম মাস জুলাইয়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৪৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। যদিও গত অর্থবছরের পুরো সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছিল প্রায় ২০৫ কোটি ডলার।
প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধিতে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত : চলতি হিসাবের মাধ্যমে দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝানো হয়। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। প্রতিবেদন বলছে, জুলাই মাসে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত রয়েছে ২৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই হিসাবে ঘাটতি ছিল ১৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। যদিও গত অর্থবছরের শেষে এই হিসাবে ১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। মূলত প্রবাসী আয়ে জোরালো প্রবৃদ্ধির কারণে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত অবস্থা বজায় রয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৯১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ফলে জুলাইতে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয় ২৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর গত অর্থবছরের পুরো সময়ে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ঋণ পরিশোধের চাপে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি : আর্থিক হিসাবে বিদেশি ঋণ ও সহায়তা, এফডিআই এবং পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট ইত্যাদি বিষয়গুলো থাকে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুলাইতে বিদেশি বিনিয়োগে ইতিবাচক ধারা বজায় থাকলেও মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি ঋণ কমেছে প্রায় ২৯ শতাংশ। সেই সঙ্গে বৈদেশিক সহায়তা ও নিট বাণিজ্যিক ঋণের (ট্রেড ক্রেডিট) স্থিতি ঋণাত্মক হওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। এ ছাড়া বৈদেশিক ঋণের আসল পরিশোধ প্রায় ৩৬ শতাংশ বেড়েছে।
সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি কমেছে : দেশে ডলার প্রবাহে উন্নতি হওয়ায় সার্বিক ভারসাম্যে ঘাটতি কমে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরের প্রথম মাসে সার্বিক ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সেটি চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে কমে হয়েছে ৫৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। যদিও গত অর্থবছর শেষে সার্বিক ভারসাম্যে বড় উদ্বৃত্ত অবস্থা দেখা যায়। ওই অর্থবছরে সার্বিক ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত হয় প্রায় ৩৩৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
চাপ কমে বাড়ছে রিজার্ভও : বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যে উন্নতির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও চাপ কমেছে। গত ৩১ জুলাই শেষে বিপিএম-৬ অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানেও বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রোস হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ এখন ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।