‘সাগাই ফোর্ট এস্কেপ’ যে কারণে লিখলাম

স্বরলিপি
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
‘সাগাই ফোর্ট এস্কেপ’ যে কারণে লিখলাম

প্রতিটি যুদ্ধের একটি আনুষ্ঠানিক সময়সীমা আছে। কিন্তু যুদ্ধের প্রভাব যুদ্ধের আগে, যুদ্ধকালীন এবং পরবর্তী সময়ও বিরাজমান থাকে। আর তা যদি হয় জনযুদ্ধ, তাহলে তো কথাই নেই। মানুষ যেমন নিজেকে জানার জন্য প্রশ্ন জারি রাখে, একটি দেশ এবং তার জনগোষ্ঠী সম্পর্কে জানার জন্য প্রশ্ন জারি রাখা জরুরি বলে আমি মনে করি। প্রশ্ন হলে বিনির্মাণের বিষয়, তাতে ভিত্তি প্রয়োজন। আর ভিত্তি খুঁজে পেতে হলে সঠিক ইতিহাস উন্মোচন প্রয়োজন। ‘একাত্তরে অবরুদ্ধ দিনের দুঃসাহস : সাগাই ফোর্ট এস্কেপ’ এই প্রয়োজনীয়তা কিছুটা হলেও মেটাবে।

সময়টা ২০১৬ সাল। পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য পত্রিকা ‘কৌরব’-এর সম্পাদক সুদেষ্ণা মজুমদার বাংলাদেশের এসেছিলেন। একুশে বইমেলা থেকে তিনি আমার গল্পগ্রন্থ ‘নিষিদ্ধ মুদ্রার ফসিল’ সংগ্রহ করেন। আমি মেলায় ছিলাম, তিনি ফোন নম্বরটিও নিয়েছিলেন। একদিন পরেই ফোন করে জানান, বইটির কভার ঠিক থাকলেও ভেতরে পৃষ্ঠাগুলো অন্য বইয়ের। তিনি ঢাকার কোথায় উঠেছেন, জেনে নিলাম এবং তার দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী আরেকটি বই নিয়ে যাই। কথাশিল্পী বাবলী হকের বাসায় ছিলেন সুদেষ্ণা মজুমদার। গিয়ে দেখি বাবলী হক, সুদেষ্ণা মজুমদার ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সোলায়মান গল্প করছেন। দুটি শব্দ মাথায় গেঁথে গিয়েছিল- সাগাই ফোর্ট। যতটুকু বুঝতে পেরেছিলাম, সেখানে বাঙালি সামরিক সদস্যদের আটকে রাখা হয়েছিল। সে সময় এ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাইনি। ২০২২ সালের দিকে আমার সেই শব্দ দুটির কথা মনে পড়ে। যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সোলায়মান এবং কথাশিল্পী বাবলী হক দম্পতি বিষয়টিতে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। তারপর শুরু কাজ করি।

তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পর মনে হলো- ঐতিহাসিক তো বটেই, বন্দি মানুষের মুক্তির ইচ্ছা কত প্রবল হতে পারে, আর মুক্তির জন্য স্বদেশ কত কাক্সিক্ষত হতে পারে, সেই সাক্ষ্যও দেয় সাগাই ফোর্ট এস্কেপ। পলায়নের জন্য রেডিওর সিগন্যাল পরিবর্তন থেকে শুরু করে, ডাইনিংরুমের চাবি চুরি, ভেন্টিলেটর ভাঙা, ষোলো ফুট দেয়াল বেয়ে নিচে নামা, পাকিস্তানিদের চোখ ফাঁকি দেওয়া, স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে যাওয়া এবং পাহাড়ি পথ ধরে আফগানিস্তানে পৌঁছানো- সবই ছিল শ্বাসরুদ্ধকর।

আফগানিস্তান হয়ে ভারতে প্রবেশ এবং ভারতের বিভিন্ন বাহিনীর ইন্টারগেশন ফেস করে এটা প্রমাণ করা যে, তারা পাকিস্তানের চর নন, শেষে সহযোগিতাপ্রাপ্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ। পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালি সামরিক সদস্যরা যেহেতু মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি, দেশে ফেরার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তাদের নেওয়া হবে কিনা- তা-ও একটি বড় প্রশ্ন ছিল। সব মিলিয়ে একটি বাস্তব ঘটনা রোমাঞ্চকর হয়ে ধরা দেয়। একাত্তরে পাকিস্তানে ২০ হাজার সামরিক সদস্য আটকে পড়েছিলেন, বইটি স্বল্পপরিসরে হলেও তাদের বাস্তব অবস্থার প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম হলো কিনা, তা পাঠকই ভালো বলতে পারবেন। া