পাইক্রফটের ক্ষমা চাওয়াকে নৈতিক জয় মানছেন রমিজ

স্পোর্টস ডেস্ক
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:৩৬
শেয়ার :
পাইক্রফটের ক্ষমা চাওয়াকে নৈতিক জয় মানছেন রমিজ

চলমান এশিয়া কাপে এক বিতর্কিত ঘটনার জেরে উত্তাল হয়ে উঠেছিল উপমহাদেশের ক্রিকেট অঙ্গন। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে খেলোয়াড়দের হাত না মেলানোর ঘটনায় বিস্ফোরক প্রতিক্রিয়া দেখায় পাকিস্তান, যার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফট। সেই ঘটনার পর ক্ষমা চাওয়ায় ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত হলেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক বোর্ড প্রধান রমিজ রাজা।

তিনি মনে করছেন, পাইক্রফটের ক্ষমা চাওয়ায় পাকিস্তানের নৈতিক অবস্থান জোরালো হয়েছে, কিন্তু তার মতে রেফারিটি বরাবরই ভারতের "ঘনিষ্ঠ", এবং এই সুযোগে ভারত নিজেদের স্বার্থে তাকে ব্যবহার করে থাকে।

টসের আগে পাকিস্তানের অধিনায়ককে ভারতীয় দলের সঙ্গে হাত না মেলানোর করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ম্যাচ রেফারি—এমন অভিযোগ তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি। পিসিবি সরাসরি দাবি করে, এ ধরনের আচরণ কেবল পক্ষপাতদুষ্টই নয়, পুরো টুর্নামেন্টের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এর জেরে রেফারির অপসারণ দাবি করে তারা, এবং এমনকি পাকিস্তানের টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়ানোর কথাও শোনা যায়।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যকার ম্যাচ এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিয়ে একটি জরুরি বৈঠকে বসে পিসিবি। সেখানে বোর্ড চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি জানান, পাকিস্তান ম্যাচটি খেলবে। পরে জানা যায়, ম্যাচ রেফারির পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ আসার পরই পাকিস্তান মাঠে নামতে সম্মত হয়।

রমিজের ক্ষোভ, ক্রিকেটকে রাজনৈতিক করা হলে কিছুই অর্জন করা যাবে না

জরুরি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রমিজ রাজাও। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমরা যে আবেগের বশবর্তী হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে নাম প্রত্যাহার করিনি, সেটাই আমাদের জয়। অবশ্যই আমি চাই, এই জয় মাঠেও প্রতিফলিত হোক।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, সব প্রতিকূলতার জবাব খেলোয়াড়দের মাঠেই দিতে হবে। আবেগ থাকা ভালো, তবে সেটির রূপান্তর ঘটানো উচিত পারফরম্যান্সে।’

তবে শুধু ম্যাচ রেফারিকে নিয়েই নয়, ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রমিজ। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যাদবের জয়টি উৎসর্গ করেন ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে এবং এক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিহতদের স্মরণ করেন। রমিজের মতে, ক্রিকেটের মঞ্চে এসব রাজনৈতিক বার্তা তুলে আনা অনুচিত।

‘সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়েছে পুরস্কার বিতরণীর ভাষণে,” বলেন রামিজ। “ক্রিকেট যদি রাজনীতির মঞ্চে পরিণত হয়, তাহলে তাতে কারও লাভ হবে না। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে এমন মন্তব্য আর শোনা যাবে না।’

রমিজের অভিযোগ আরও বিস্তৃত। তিনি দাবি করেন, পাইক্রফটকে ভারতের ম্যাচে এতবার দেখা গেছে যে তাকে ভারতের "ঘরোয়া ম্যাচ রেফারি" বললেও ভুল হবে না।

‘অ্যান্ডি পাইক্রফটকে আমি সবসময় ভারতের ম্যাচে দেখতে পাই। মনে হয় যেন তিনি তাদের নির্ধারিত রেফারি। এটা একতরফা এবং সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।’

তবে বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। আন্তর্জাতিক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি বার পাইক্রফট দায়িত্ব পালন করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচে (১৩৫টি)। এরপর রয়েছে শ্রীলংকার (১৩২) এবং ভারতের (১২৪)। পাকিস্তানের ম্যাচেও তার উপস্থিতি কম নয়—১০২টি। এছাড়া ইংল্যান্ডের (১০৭), বাংলাদেশের (৮৩) এবং অস্ট্রেলিয়ার (৮০) ম্যাচেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

অর্থাৎ, পরিসংখ্যান অনুযায়ী পাইক্রফটের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভারসাম্যপূর্ণই বলা যায়।