অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে ডর্টমুন্ডের স্বপ্ন ভেঙে জুভেন্টাসের ফেরা

স্পোর্টস ডেস্ক
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:০৯
শেয়ার :
অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে ডর্টমুন্ডের স্বপ্ন ভেঙে জুভেন্টাসের ফেরা

আলিয়াঞ্জ স্টেডিয়াম দেখল এক রোমাঞ্চকর লড়াই। দুই দলের মিলিত গোলের বৃষ্টিতে দ্বিতীয়ার্ধটা এক রুদ্ধশ্বাস থ্রিলারে জন্ম দেয়। দারুণ এক জয় যখন প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছিল বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, তখনই যোগ করা সময়ে দুই গোল করে অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচ ড্র করে নেয় জুভেন্টাস।

ম্যাচের ৯৩ মিনিট পর্যন্ত ৪-২ গোলে পিছিয়ে ছিল ইতালিয়ান ক্লাবটি। সেখান থেকে মাত্র কয়েক মিনিটে দুটি গোল করে সমতা ফেরানো—চ্যাম্পিয়নস লিগে এমন নাটকীয়তা খুব একটা দেখা যায় না। শেষ বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তে সমতায় ফিরিয়ে রোমাঞ্চের চূড়ায় নিয়ে যায় ম্যাচটি।

এই মাঠেই কয়েকদিন আগে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে সিরি আ’র রুদ্ধশ্বাস এক ম্যাচে ৪-৩ গোলে জিতেছিল জুভেন্টাস। এবারও দর্শকরা পেয়েছে আরও একবার শ্বাসরুদ্ধকর ফুটবল অভিজ্ঞতা। তবে এবার জয় নয়, বরং হারের মুখ থেকে বাঁচার আনন্দ।

এই ম্যাচের সবকটি গোলই হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে। প্রথম ২২ মিনিটেই দেখা যায় পাঁচটি গোল, আর পরের ১০ মিনিটে আরও তিনটি। পুরো ম্যাচে বল দখলে দুই দলই ছিল প্রায় সমানতালে। ইউভেন্তুস ১৯টি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখতে পেরেছে সাতটি, অন্যদিকে ডর্টমুন্ড ১০টি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখে পাঁচটি।

দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নামা দুসান ভ্লাহোভিচ জুভেন্টাসের হয়ে জোড়া গোল করেন। বাকি দুটি গোল করেন কেনান ইলদিজ ও লয়ড কেলি। ডর্টমুন্ডের হয়ে গোল করেন কারিম আদেইয়েমি, ফিলিক্স মেচা, ইয়া কৌতো ও রামি বেনসেবেইনি।

প্রথমার্ধে দুই দলই ছিল অনেকটাই নিষ্প্রভ। ৪৫ মিনিটে কেবল দুটি শট ছিল লক্ষ্যে—দুটিই জুভেন্টাসের। বিরতির পর সপ্তম মিনিটেই ম্যাচে প্রথম গোল আসে ডর্টমুন্ডের পক্ষে। সতীর্থের পাস পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন আদেইয়েমি।

৬৩তম মিনিটে সমতা ফেরান জুভেন্টাসের তরুণ ফরোয়ার্ড ইলদিজ। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তার শট সরাসরি জড়িয়ে যায় জালের উপরের কোণে। ইন্টার মিলানের বিপক্ষেও এমনই দূরপাল্লার শটে করেছিলেন গোল, এবার সেই কীর্তি আবারও ছুঁয়ে দেখান ২০ বছর বয়সী এই তুর্কি।

তবে সমতায় ফেরার পর দ্রুত আবার পিছিয়ে পড়ে জুভেন্টাস। ৬৫তম মিনিটে ডর্টমুন্ডকে আবার এগিয়ে দেন মেচা। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তার শটেও কিছুই করার ছিল না গোলরক্ষকের। কিন্তু দুই মিনিট পরই ৬৭তম মিনিটে সেই ব্যবধান শোধ করেন ভ্লাহোভিচ। মাঝমাঠ থেকে আসা লম্বা পাস ধরে ডি-বক্সে ঢুকে ঠান্ডা মাথায় বল পাঠান গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে।

৭৪তম মিনিটে তৃতীয়বারের মতো এগিয়ে যায় ডর্টমুন্ড। প্রতিপক্ষের ভুলে বল কাড়েন কৌতো, এরপর ডি-বক্সে ঢুকে কাছের পোস্ট দিয়ে ঠান্ডা মাথায় গোল করে দলকে এগিয়ে নেন ৩-২ ব্যবধানে।

৮০তম মিনিটে ব্যবধান কমানোর সুযোগ এসেছিল জুভেন্টাসের সামনে। ইলদিজের নেওয়া দূরপাল্লার শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে ডর্টমুন্ড গোলরক্ষকের স্পর্শে। সেই সময়টাতে গোল হলে ম্যাচের চিত্র হয়তো বদলে যেত আরও আগেই।

এরপর ৮৬তম মিনিটে ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় ডর্টমুন্ড। প্রতিপক্ষের হ্যান্ডবলের কারণে পাওয়া পেনাল্টি থেকে গোল করেন বেনসেবেইনি। ৪-২ গোলে এগিয়ে গিয়ে তখন জয় প্রায় নিশ্চিতই মনে হচ্ছিল জার্মান ক্লাবটির জন্য।

কিন্তু সেখান থেকেই শুরু হয় জুভেন্টাসের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন। যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে ডান দিক থেকে আসা পাস ধরে কাছ থেকে গোল করেন ভ্লাহোভিচ। এরপর ষষ্ঠ মিনিটে আবারও তার অবদান। ডান দিক থেকে বাড়ানো ভ্লাহোভিচের ক্রসে বক্সে ফাঁকায় হেডে বল জালে পাঠান লয়ড কেলি। গোলের সময় ম্যাচের বাকি ছিল মাত্র ৪০ সেকেন্ড!

শেষ বাঁশির সঙ্গে সঙ্গে যেন পুরো স্টেডিয়াম ফেটে পড়ে উল্লাসে। একসময়ের হার নিশ্চিত মনে হলেও লড়াকু মানসিকতায় ম্যাচ বাঁচিয়ে নেয় জুভেন্টাস। আর ডর্টমুন্ড—তাদের জন্য এই ড্র যেন হারই। হাতে থাকা জয় ছিনিয়ে নিয়েছে অতিরিক্ত সময়ের দুটি গোল।