এবার এইচএসসি পরীক্ষায় ন্যায্য ফলের প্রত্যাশা
এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন নিয়ে প্রতিবছরই নানা বিতর্ক ও অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে থাকেন। যদিও পুনর্নিরীক্ষণে অনেক শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করে। এ অবস্থায় ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবার উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য পরীক্ষকদের ১৫ দিনের পরিবর্তে বেশ কিছু বিষয়ের জন্য ২০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। বোর্ড মনে করে, এর ফলে যথাযথভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন সম্ভব হবে, পুনর্নিরীক্ষণের ঝুঁকি কমবে এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এ বছর এসএসসি পরীক্ষার পর ৯২ হাজার ৮৬৩ জন শিক্ষার্থীর দুই লাখ ২৩ হাজার ৬৬৪টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করে। বিষয়ভিত্তিকভাবে সবচেয়ে বেশি আবেদন এসেছে গণিতে ৪২ হাজার ৯৩৬টি, এরপর ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে ১৯ হাজর ৬৮৮টি করে, পদার্থবিজ্ঞানে ১৬ হাজার ২৩৩টি এবং বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে ১৩ হাজার ৫৫৮টি। সবচেয়ে কম আবেদন এসেছে চারু ও কারুকলা বিষয়ে ৬টি।
এরপর পুনর্নিরীক্ষণের ফলাফলে দেখা গেছে, ঢাকা বোর্ডের প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ২৯৩ জন শিক্ষার্থী ফেল থেকে পাস হয়েছে, তিনজন সরাসরি ফেল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে, আর নতুন করে ২৮৬ জন জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। বাকি শিক্ষার্থীদের গ্রেডও বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মিরপুরের অভিভাবক মাহমুদা খাতুন বলেন, আমার মেয়ের গণিতে সব উত্তর সঠিক ছিল। ফলাফল দেখে আমরা অবাক হয়েছি। খাতা চ্যালেঞ্জ করলে গ্রেড বেড়ে যায়। তাহলে কি প্রথমবার খাতা যারা দেখেছে তারা দায়িত্বশীল ছিলেন না?
ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম মন্তব্য করেন, আমরা সারা বছর পরিশ্রম করি, তবে খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন হয় না। পরে আবার টাকা দিয়ে আবেদন করতে হয়। মনে হয় যেন বোর্ডের ব্যবসা।
শিক্ষা বোর্ডও এই সমস্যা গুরুত্বসহকারে দেখছে। এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে ৭১ জন প্রধান পরীক্ষক ও শিক্ষককে পাঁচ বছরের জন্য কালোতালিকাভুক্ত করা হয়েছে। শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষকরা নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত। বিষয়ভিত্তিকভাবে সবচেয়ে বেশি শিক্ষকরা ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে দায়িত্বে অবহেলার কারণে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির জানান, ‘উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই শিক্ষকদের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এ বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এসএম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘অতিরিক্ত সময় পরীক্ষকরা ধীরেসুস্থে খাতা মূল্যায়ন করতে পারবেন এবং শিক্ষার্থীরা ন্যায্য মূল্যায়ন পাবেন।’
এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সেলিম মাহমুদ এবং শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক মাসুদ রানা মনে করেন, শুধু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়; প্রশ্ন তৈরি থেকে খাতা মূল্যায়ন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া পুনর্নিরীক্ষণের এই অবস্থা কাটানো সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, প্রতি বিষয়ে পুনর্নিরীক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীদের ১৫০ টাকা ফি দিতে হয়। এতে লাখো শিক্ষার্থী আবেদন করলে কোটি কোটি টাকা বোর্ডের কোষাগারে জমা হয়। অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, শিক্ষার্থীদের কষ্টার্জিত অর্থ খরচ করে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে হয়।