বক্সিং কিংবদন্তি রিকি হ্যাটন মারা গেছেন

এস ইসলাম, লন্ডন থেকে
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৪০
শেয়ার :
বক্সিং কিংবদন্তি রিকি হ্যাটন মারা গেছেন

ব্রিটিশ বক্সিং কিংবদন্তি রিকি হ্যাটন আর নেই। গত রোববার সকালে ম্যানচেস্টারের হাইড এলাকায় নিজ বাড়িতে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৬ বছর। 

‘দ্য হিটম্যান’ খ্যাত হ্যাটন আগামী ডিসেম্বরে দুবাইয়ে ঈসা আল দাহ-এর বিপক্ষে রিংয়ে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেই প্রত্যাবর্তনের আগে তার এমন প্রস্থান ভক্তদের স্তব্ধ করে দিয়েছে।

রিকি হ্যাটনের মৃত্যুর পেছনে প্রাথমিকভাবে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশের এক মুখপাত্র। মৃত্যুকালে তিনি তিন সন্তান-মিলি, ফিয়ার্ন ও ক্যাম্পবেল এবং এক নাতনি রেখে গেছেন।

১৯৯৭ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে রিংয়ে পা রাখা রিকি ছিলেন যেন এক ঝলক বজ্রপাত। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে ২০০৫-এ কস্টিয়া স্যু আর ২০০৭-এ হোসে লুইস ক্যাস্তিলোর মতো দাপুটে বক্সারদের হারিয়ে তিনি জিতে নেন একের পর এক শিরোপা। 

ম্যানচেস্টারের আকাশজুড়ে তার নাম ছিল গর্বের প্রতীক, সিটির নীল রঙের শর্টস পরে, ‘ব্লু মুন’ গানে রিংয়ে প্রবেশ করতেন তিনি। কিন্তু গ্লাভস খুলে রাখার পর জীবনটা সহজ ছিল না। ২০১২ সালে অবসর নেওয়ার পর হ্যাটন খোলাখুলিভাবে বলেছিলেন, তার বিষণ্ণতা ও মদ্যপানের লড়াইয়ের কথা।

তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। ১৩ বছর পর দুবাইয়ে এক প্রদর্শনী ম্যাচের জন্য ফের অনুশীলন শুরু করেছিলেন, ইনস্টাগ্রামে জিমের ভিডিও শেয়ার করেছিলেন ঠিক কয়েকদিন আগেই। শুক্রবার জিমে যাননি, আবার শনিবার এক বক্সিং ম্যাচেও হাজির ছিলেন না। এর পরদির রোববার তিনি যেন নিঃশব্দেই চলে গেছেন চূড়ান্ত গন্তব্যে।

এদিকে তার মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো ক্রীড়াজগতে। সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আমির খান সামাজিক মাধ্যম এক্সে (আগের নাম টুইটার) লিখেছেন,‘ব্রিটেনের অন্যতম সেরা বক্সার, বন্ধু, পরামর্শদাতা, আর এক যোদ্ধা।’ টাইসন ফিউরি লিখলেন,‘এমন আর একজন রিকি হ্যাটন কখনো হবে না।’

বিবিসির বিশ্লেষক স্টিভ বান্স বলেন, ‘এই খবর একেবারেই বিশ্বাস করা যাচ্ছে না-সে তো অনেক ভালো অবস্থায় ছিল।’

রোববার ম্যানচেস্টার ডার্বির আগে সিটি ও ইউনাইটেডের সমর্থকেরা এক মিনিটের করতালিতে সম্মান জানান তাদের প্রিয় সন্তানকে। ম্যানচেস্টার সিটি ক্লাব জানায়, তারা ‘মর্মাহত’ এবং রিকিকে স্মরণ করল ‘ব্রিটিশ বক্সিংয়ের এক আইকন’ হিসেবে।

রিকি হ্যাটন জীবনে ৪৮টি লড়াইয়ের মধ্যে জিতেছিলেন ৪৫টি। হেরেছিলেন কেবল তিনবার-তাও ফ্লয়েড মেওয়েদার আর ম্যানি প্যাকিয়াওর মতো কিংবদন্তিদের কাছে। কিন্তু জীবনের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ ছিল হয়তো তার নিজের মনের ভেতর।

এদিকে তার বাড়ি ‘দ্য হার্টব্রেক’-এর সামনে ফুলের তোড়া, নীল-সাদা স্কার্ফ আর অশ্রুসজল বার্তায় ঢেকে গেছে পথ।একটি কার্ডে লেখা, ‘আমরা এতটাই স্তব্ধ যে কী লিখব বুঝতে পারছি না… ধন্যবাদ, এমন এক সুন্দর আত্মা হওয়ার জন্য।’এভাবেই থেমে গেল ‘হিটম্যান’-এর শেষ রাউন্ড।

ম্যানচেস্টারের আকাশে হয়তো আবারও বাজছে সেই পুরনো গান- ‘ব্লু মুন’-ঠিক যেমনটা বাজত, যখন তরুণ ছেলেটি গ্লাভস পরে ঝাঁপিয়ে পড়ত পৃথিবী জয়ের স্বপ্নে।