রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্যোগ
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য শীর্ষ ঋণখেলাপি মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চায় অর্থ মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। খবর অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রের।
জানা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের মামলাগুলো কোনটি কোন কারণে আটকে আছে, চিহ্নিত করে সমস্যার সমাধান ও দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সহযোগিতা চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি প্রতিটি ব্যাংক এসব মামলার অগ্রগতি, মামলা আটকে থাকার কারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করতে একজন করে কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিক নিযুক্ত রাখবে। এ ছাড়া প্রতিটি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শীর্ষ ঋণখেলাপি মামলাগুলোর অগ্রগতি নিয়ে প্রতি মাসে একটি করে মিটিং করবেন এবং তার ফলাফল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানাবেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সভায় আলোচনা হয়েছে, অনেক সময় আদালত থেকে খেলাপি ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে সমন ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও পুলিশ তা বাস্তবায়ন করে না। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চাইবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। অনেক সময় আদালত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে রায় দিলেও বন্ধকি সম্পত্তি প্রভাবশালী দখলদারদের দখলে থাকে। তাদের উচ্ছেদ করে ব্যাংক তা দখল করতে গেলে পুলিশের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়া যায় না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়েও সহযোগিতা চাইবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তা ছাড়া জেলা প্রশাসকরা যাতে স্থানীয় পর্যায়ে বৈঠকে নিম্ন আদালতে চলমান শীর্ষ ঋণখেলাপি মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিতে উৎসাহী হন, সেজন্য জেলা প্রশাসক সম্মেলনে তাদের সহযোগিতা চাইবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ ইতিবাচক। খেলাপিদের রিট করতে কোনো অগ্রিম অর্থ জমা দিতে হয় না। এ ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা দিয়ে রিটের বিধান রাখা গেলে উচ্চ আদালতে রিটের প্রবণতা কমবে এবং ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে অগ্রিম কিছু অর্থ আদায় হবে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে পাওয়া ঋণখেলাপি মামলার তথ্য পর্যালোচনা করে তৈরি করা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিবেদন অনুসারে, সোনালী ব্যাংকের ১০টি মামলায় ৫ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ১০ মামলায় ৩ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, সাধারণ বীমা করপোরেশনের ৩ হাজার ৭১৯ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ৩ হাজার ৭৪৮ কোটি, বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার ৪০০ কোটি ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মামলা রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ১০ মামলায় ৮৭৬ কোটি টাকা, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ৮৬০ কোটি টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ২৯৪ কোটি টাকা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৮৪ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মামলা আছে।
জানা গেছে, ব্যাংক খাতে শীর্ষ খেলাপি মামলার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মাহিন এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। এ ছাড়া এফএমসি ডকইয়ার্ড লিমিটেডের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা, গ্যালাক্সি সোয়েটার অ্যান্ড ইয়ার্ন ডায়িং লিমিটেডের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ১৪৬ কোটি, রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৮৪ কোটি, প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেডের ১ হাজার ৭১ কোটি ও মেরিন ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, ব্যাংক ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা করলেও তা শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। মাসের পর মাস পড়ে থাকছে। মামলায় গতি আনতে বাদী হিসেবে সরকারের আইনানুগ এখতিয়ার অনুযায়ী কাজ করা হবে।