নওয়াজের হ্যাটট্রিকে আফগানদের গুঁড়িয়ে শিরোপা পাকিস্তানের
মোহাম্মদ নওয়াজের ঘূর্ণি জাদুতে শারজাহর রাতটা রূপ নিল পাকিস্তানের জন্য স্মরণীয় এক ট্রফি উৎসবের। বাঁহাতি স্পিনারের হ্যাটট্রিক, সঙ্গে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলো আফগানিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ। মাত্র ৬৬ রানে অলআউট হয়ে আফগানরা হারল ৭৫ রানে, আর তাতেই ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের শিরোপা উঠল সালমান আলি আগার নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের হাতে।
রবিবার শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ১৪১ রান করেছিল পাকিস্তান। সেই রানই আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরিণত হয় এক পাহাড়সম চ্যালেঞ্জে। শাহিন শাহ আফ্রিদির শুরুটা করে দেওয়া আঘাতের পর বাকি কাজটা নিখুঁতভাবে সেরে নেন স্পিনাররা, যার নেতৃত্বে ছিলেন নওয়াজ।
চার ওভারে মাত্র ১৯ রানে ৫ উইকেট—এর মধ্যে একটি মেডেন ও একটি হ্যাটট্রিক! মোহাম্মদ নওয়াজের ক্যারিয়ারসেরা এই বোলিং পারফরম্যান্সই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের হয়ে হ্যাটট্রিক করা মাত্র তৃতীয় বোলার তিনি, তার আগে এই কীর্তি গড়েছেন ফাহিম আশরাফ (২০১৭) ও মোহাম্মদ হাসনাইন (২০১৯)।
পঞ্চম ওভারে আবরার আহমেদ আউট করেন সেদিকউল্লাহ আতালকে। পরের ওভারে প্রথমবার বল করতে এসে পরপর দুই বলে ফেরান দারভিশ রাসুলি ও আজমাতউল্লাহ ওমারজাইকে। এরপর নিজের পরের ওভারের প্রথম বলেই ইব্রাহিম জাদরানকে স্টাম্পিংয়ে ফেলে পূর্ণ করেন হ্যাটট্রিক। ওভারেই আরেকটি উইকেট তুলে নেন কারিম জানাতের, রান দেন না একটিও—ফিগার তখন ২-১-১-৪!
শেষ ওভারে রাশিদ খানকে ফিরিয়ে পূর্ণ করেন পাঁচ উইকেটের মাইলফলক। টি-টোয়েন্টিতে তার আগের সেরা ছিল ৫ রানে ৩ উইকেট। ব্যাট হাতেও নওয়াজ খেলেছেন ২১ বলে ২৫ রানের কার্যকর ইনিংস, মেরেছেন ২টি ছক্কা।
নওয়াজের হ্যাটট্রিকের আগে প্রথম আঘাত হেনেছিলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি, ম্যাচের প্রথম ওভারে বিদায় করেন গুরবাজকে। এরপর আফগান ব্যাটিংয়ে শুরু হয় উইকেট পতনের মিছিল।
মাত্র ৩২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে আফগানিস্তান। শেষদিকের ব্যাটাররাও পারেননি কিছু করতে। ১০ বলে ৩ রান করে ফেরেন মোহাম্মদ নাবি, রাশিদ খানও বেশিক্ষণ টিকেননি। শেষ দুই উইকেট নেন বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার সুফিয়ান মুকিম।
শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তানের ইনিংস থামে মাত্র ৬৬ রানে—টি-টোয়েন্টিতে এটি তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। এর চেয়ে কম (৫৬ রান) তারা করেছিল কেবল ২০২৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান শুরুতেই হারায় ওপেনার সাহিবজাদা ফারহানকে (০)। তবে দ্বিতীয় উইকেটে সাইম আইয়ুব (১৯ বলে ১৭) ও ফখার জামান (২৬ বলে ২৭) গড়েন ৪৯ রানের জুটি।
কিন্তু এরপর দ্রুত ধসে পড়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং। ৫ উইকেটে ৭২ রান হয়ে গেলে মনে হচ্ছিল বড় স্কোর অসম্ভব। তখন দায়িত্ব নেন মিডল অর্ডারের তিন ব্যাটার—সালমান আলি আগা (২৭ বলে ২৪), মোহাম্মদ নওয়াজ (২১ বলে ২৫) ও ফাহিম আশরাফ (৮ বলে ১৫)। তাদের ছোট কিন্তু কার্যকর ইনিংসেই সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৪১ রান। শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়ে যায় ম্যাচের জয়সূচক পুঁজি।
এই জয়ের মাধ্যমে শুধু ট্রফিই নয়, এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের আগে আত্মবিশ্বাসও সঙ্গী করল পাকিস্তান। প্রথম পর্বে আফগানিস্তানের কাছে হারের প্রতিশোধ নেওয়ার পাশাপাশি, স্পিন আক্রমণে যে তাদের শক্ত ভিত গড়ে উঠছে, সেটারও ইঙ্গিত মিলল এই ম্যাচে।
শারজাহতে এই সিরিজের সাতটি ম্যাচেই জয় এসেছে আগে ব্যাট করা দলের পক্ষে!