ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন বোমা বিস্ফোরণ, নিহত ১

স্পোর্টস ডেস্ক
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:১০
শেয়ার :
ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন বোমা বিস্ফোরণ, নিহত ১

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের একটি ক্রিকেট মাঠে ম্যাচ চলাকালে ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণে প্রাণ গেল অন্তত একজনের। আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন, যাদের মধ্যে শিশুদেরও পাওয়া গেছে। দেশটির দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি হামলায় ক্ষতবিক্ষত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত এই এলাকায় আবারও সন্ত্রাসের ছায়া নেমে এসেছে।

শনিবার খাইবার পাখতুনখাওয়ার বাজৌর জেলার খার তেহসিল এলাকার কাউসার ক্রিকেট গ্রাউন্ডে স্থানীয় তরুণদের অংশগ্রহণে একটি প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ম্যাচটি চলাকালে আকস্মিকভাবে বিস্ফোরণ ঘটলে পুরো মাঠে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মাঠে থাকা খেলোয়াড় ও দর্শকরা জীবন বাঁচাতে চারদিক ছুটোছুটি শুরু করেন।

স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা ওয়াকাস রফিক জানান, হামলাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) ব্যবহারের মাধ্যমে ঘটানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এটি নিছক কোনো বিচ্ছিন্ন সহিংসতা নয়, বরং নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে সংঘটিত একটি জঙ্গি হামলা বলে আমরা সন্দেহ করছি।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিস্ফোরণের পর পুরো মাঠে ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছেয়ে যায় এবং লোকজন চিৎকার করতে করতে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করেন।

এই হামলার পরপরই আরও একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, হামলাকারীরা কোয়াডকপ্টারের (ড্রোন) সাহায্যে কাছাকাছি একটি থানাতেও হামলা চালানোর চেষ্টা করে। সৌভাগ্যবশত সেই হামলাটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, ফলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।

ঘটনার পর এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী আনুষ্ঠানিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে তদন্তকারী সংস্থাগুলোর প্রাথমিক সন্দেহ, নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এ হামলার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। এই গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে, বিশেষত খাইবার পাখতুনখাওয়ার মতো সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে বাজৌর জেলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সরবকাফ’ নামে একটি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করেছে।

সরকারের ভাষ্যমতে, এই অভিযানের মূল লক্ষ্য হলো সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সক্রিয় জঙ্গিদের ঘাঁটি ধ্বংস করে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভিযান শুরুর পর থেকেই জঙ্গি সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে পাল্টা হামলার আশঙ্কা ছিল, যা এখন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।

এই অঞ্চলে এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মাত্র এক সপ্তাহ আগে বাজৌরের লাঘারাই এলাকায় একটি থানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য ও এক স্থানীয় বাসিন্দা আহত হন। থানার পাশে থাকা একটি গাড়িও বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশ দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গি তৎপরতার কারণে অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে টিটিপি ও অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সক্রিয়তা পাকিস্তান সরকারের জন্য ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।