রাজউকের খেয়ালখুশির বিধি, ঠকছেন সেবাপ্রার্থীরা
খেয়াল খুশিমতো বিধিমালা তৈরি করে সেবাগ্রহীতাদের ঠকানোর অভিযোগ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিরুদ্ধে। একবার বিধিমালা করা হয় রাজধানীতে যাদের প্লট বা ফ্ল্যাট নেই তাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করবে সরকারি এই প্রতিষ্ঠান। সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও আবেদন করার সুযোগ রাখা হয়। এরপর করা হয়, ঢাকায় একই ব্যক্তির নামে অন্য কোথাও সরকারি প্লট বা ফ্ল্যাট থাকলে তারা অযোগ্য হবেন। পরে সেটিও সংশোধন করে নতুন বিধি করা হয়- স্বামী, স্ত্রী বা পরিবারের অন্য সদস্যের নামে প্লট বা ফ্ল্যাট থাকলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। এভাবে সময়ে সময়ে বিধিমালা পরিবর্তন করে শত শত মানুষকে পথে বসানোর অভিযোগ রাজউকের বিরুদ্ধে।
রাজউকের বিধি অনুসরণ করে ২০১০ সালে প্রবাসী দুই ভাই নিজাম উদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিন যৌথভাবে তাদের স্ত্রীদের নামে পাওয়ার মূলে একটি প্লট ক্রয় করেন। তখনকার বাজারমূল্যে অভিনয়শিল্পী খলিল উল্যাহ খানের প্লটটি কেনার পূর্বে রাজউক থেকে যাবতীয় তথ্য যাচাই করেন তারা। রাজউকের অনুমোদনসাপেক্ষে আম-মোক্তার বলে সমস্ত কিস্তি পরিশোধ করেন। এরপর লিজ দলিল করে ভূমি অফিস থেকে মিউটেশন করা হয় এবং রাজউকের নিকট নিজেদের নামে হস্তান্তরের অনুমোদন নেন। ভূমি অফিসের রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী তাদের নামে উত্তরা আবাসিক এলাকার ১৫ সি নম্বর সেক্টরের ২ ডি সড়কে ৩ কাঠা আয়তনের ১৩ নম্বর প্লটের মালিকানা চিহ্নিত করা হয়।
এরপর দুই ভাই আবার ইতালি চলে যাওয়াতে দুর্ভোগে পড়েন তারা। দেশে ফিরে ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর হস্তান্তর দলিল মূলে রাজউকে নামজারির আবেদন করেন তারা। তখন জানতে পারেন নতুন শর্ত জুড়ে দিয়েছে রাজউক। নামজারির আগে ওই প্লটের এমআইএস করাতে হবে। এমআইএস করে রাজউকে গেলে জানানো হয়, যার কাছ থেকে প্লটটি ক্রয় করা হয়েছে তার নামে ৭৭-৮৮ সালের দিকে আরও একটি প্লট রাজউক হতে বরাদ্দ ছিল এবং সেটিও অন্যজনের কাছে বিক্রি করে করা হয়। তাই একই ব্যক্তির নামে দুটি প্লট থাকায় তাদের নামে নামজারি করা সম্ভব না বলে জানায় রাজউক।
এ অবস্থায় রেমিট্যান্সযোদ্ধা দুই ভাই দিশেহারা হয়ে পড়েন। নামজারির জন্য গেলে রাজউক থেকে কোনো সমাধান না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাদের। প্রবাসে থাকায় ঘন ঘন রাজউকের নীতিমালা পরিবর্তনের বিষয়টি তারা অবগত নন।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নিজাম উদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, রাজউক থেকে সব তথ্য যাচাই-বাছাই করেই প্লটটি নিয়েছি। তখন এমআইএস করার বিষয়টি বিধিমালায় ছিল না। তাই করা হয়নি। রাজউকের অনুমোদন নিয়েই তো রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। আমাদের দুই ভাইয়ের সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে প্লটটি কিনেছিলাম। ঢাকায় একটি বাড়ির দেখেছিলাম, কিন্তু সেটি এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। আমরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশকে সহযোগিতা করেছি, সে জন্যই কি আমাদের এমন শাস্তি?
এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজউকের উত্তরা অঞ্চলের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, এ রকম শত শত প্লট বাতিল হয়েছে। এর আগের চেযারম্যান একটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন, এভাবে তৃতীয় পক্ষ যারা অন্যের প্লট ক্রয় করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের দুপক্ষকে ডেকে অন্তত কিছুটা জরিমানা দেওয়া যায় কিনা তা খতিয়ে দেখার। কিন্তু তিনি সেটা করতে ব্যর্থ হন।
রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, এরকম অনেক প্লট আছে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী দুটি থাকলে একটা বাতিল হবে। কিন্তু যেসব প্লট হস্তান্তর হয়েছে, প্রথম পক্ষ বিক্রি করে চলে গেছে এবং এখন যারা ক্রয় করেছে তাদের কী হবে। এ নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে মৌখিকভাবে জানতে চেয়েছি। এ রকম অনেক ভুক্তভোগী রয়েছে। তাদের বিষয়টার একটা সুরাহা হওয়া দরকার।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, এ রকম শতাধিক প্লট রয়েছে। যেগুলো হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। অনেকে প্লট পাওয়ার পর বিক্রি করেছেন। যখন কেনাবেচা হয়েছে তখন এমন কোনো বিধান ছিল না যে, একটা থাকলে আরেকটা পাবে না। তাই তখনকার বিধান অনুযায়ী সঠিক ছিল। অনেক প্রবাসী রয়েছেন যারা সরাসরি প্লট পাননি কিন্তু এ রকম প্রথম পক্ষ বা দ্বিতীয় পক্ষের মাধ্যমে প্লটের মালিক হলেও বুঝে নিতে পারছেন না।