নির্বাচনী প্রচারে ইসির একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
নির্বাচনী প্রচারে ইসির একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা সংশোধন করে চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে সামাজিক মাধ্যমের অপব্যবহারের পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে কোনো ধরনের কনটেন্ট তৈরি ও প্রচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনী প্রচার ও ভোটগ্রহণের সময় পোস্টার, ড্রোন, কোয়াডকপ্টার বা এ জাতীয় যন্ত্র ব্যবহারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচার সামগ্রীতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে পলিথিন ও রেক্সিনের ব্যবহার। বুধবার এই আচরণবিধি চূড়ান্ত করে ইসি।

আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের আগেই এ বিধান কার্যকর হবে। প্রার্থী, তার এজেন্ট বা দলের সামাজিক মাধ্যমের নাম, অ্যাকাউন্ট আইডি, ই-মেইল আইডি এবং অন্যান্য তথ্য প্রচার শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দিতে হবে। সামাজিক মাধ্যমে ঘৃণ্য বক্তব্য, ভ্রান্ত তথ্য, কারও মুখ বিকৃত করা, মিথ্যা তথ্য প্রচারসহ ক্ষতিকর কনটেন্ট তৈরি বা প্রচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে ইসি। বিশেষ করে প্রতিপক্ষ, নারী, সংখ্যালঘু বা অন্য কোনো গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে ঘৃণ্য, ব্যক্তিগত আক্রমণ বা উসকানিমূলক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না।

আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের শাস্তি বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংশোধিত বিধিমালায় প্রার্থিতা বাতিলের বিধান এবং জরিমানার পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড় লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের ছয় মাস পর্যন্ত কারাদ-ের বিধান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, নির্বাচনী প্রচারে এআই ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যম বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এমন কোনো ব্যবহার করা যাবে না, যা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে। এই সংশোধিত বিধিমালা আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।

পোস্টার ও ব্যানারে নিষেধাজ্ঞা : আচরণবিধি অনুযায়ী, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারে পোস্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া রেক্সিন, পলিথিন, প্লাস্টিক, পিভিসি বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদানে তৈরি কোনো ধরনের লিফলেট, হ্যান্ডবিল, ফেস্টুন বা ব্যানার ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। একজন প্রার্থী কোনো নির্বাচনী এলাকায় সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড স্থাপন করতে পারবেন। প্রতিটি বিলবোর্ডের আকার সর্বোচ্চ ১৬ ফুট বাই ৯ ফুট হতে পারবে।

ভিভিআইপি-সংক্রান্ত বিধান : আচরণবিধিতে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, উপমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, মেয়রসহ সাংবিধানিক পদে থাকা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি) হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এই শ্রেণির ব্যক্তিদের নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রার্থীরা কোনো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা সমিতি থেকে সংবর্ধনা নিতে পারবেন না।

ড্রোন, হেলিকপ্টার ও লাউড স্পিকার : নির্বাচনী প্রচার ও ভোটগ্রহণের সময় ড্রোন, কোয়াডকপ্টার বা এ ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের

ব্যক্তিরা নির্বাচনী প্রচারে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন, তবে হেলিকপ্টার থেকে কোনো লিফলেট, ব্যানার বা প্রচারসামগ্রী বিতরণ বা ঝোলানো যাবে না। এর আগে কেবল দলীয় প্রধান বা সমপর্যায়ের নেতাদেরই হেলিকপ্টার ব্যবহারের অনুমতি ছিল।

মাইক বা লাউড স্পিকারের শব্দ ৬০ ডেসিবলের বেশি হতে পারবে না। প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইক ব্যবহারের অনুমতি থাকবে। আচরণবিধি অমান্য করলে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল পর্যন্ত হতে পারে।