আগস্টে পোশাক রপ্তানিতে ধাক্কা, তবু সম্ভাবনাময়

আব্দুল্লাহ কাফি
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
আগস্টে পোশাক রপ্তানিতে ধাক্কা, তবু সম্ভাবনাময়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক নীতির কারণে অস্থিরতার মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পোশাক রপ্তানি বাড়লেও আগস্টে এসে ধাক্কা খেয়েছে। তা সত্ত্বেও অর্থবছরের শুরুর দুই মাসে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক। অর্থনীতিবিদ ও শিল্প উদ্যোক্তাদের মতে, পাল্টা শুল্ক নীতির কারণে অস্বস্তির পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার দুয়ারও খুলেছে। এখনই সরকারের উদ্যোগ ও নীতি সহায়তা নিশ্চিত করতে না পারলে সেই সম্ভাবনা হাতছাড়া হয়ে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পর থেকে তৈরি পোশাক শিল্পে অস্তিরতা শুরু হয়। তবে শুল্কের হার ৩৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মনে কিছুটা স্বস্তি আসে। শুল্ক আরোপের পর ক্রয়াদেশ কমতে থাকে। ক্রেতাদের মধ্যে শুরু হয় অস্বস্তি। দুই পক্ষের মধ্যে অস্বস্তি কারণে ক্রয়াদেশ কম আসায় উৎপাদনও কম হয়। এ কারণে রপ্তানিও কম হয়েছে বলে মনে করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সদ্য বিদায়ী আগস্ট মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পোশাক রপ্তানি কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। তবে চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরের প্রথম ২ মাসে (জুলাই-আগস্ট) পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি হয়েছে ৭১৩ কোটি (৭.১৩ বিলিয়ন) ডলার। গত অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রপ্তানির পরিমাণ ৬৫০ কোটি (৬.৫০ বিলিয়ন) ডলার। অর্থাৎ, বছরের ব্যবধানে চলতি অর্থবছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আলোচিত দুই মাসে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩৯৫ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি। আর ওভেন পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩১৮ কোটি ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি।

তবে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে গত বছরের একই মাসের তুুলনায় পোশাক রপ্তানি কিছুটা কমেছে।

সদ্য সমাপ্ত আগস্টে মোট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩১৭ কোটি ডলারের। গত বছরের আগস্টে হয়েছিল ৩৩৩ কোটি ডলারের। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে পোশাক খাতে রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৯৩৫ কোটি ডলারের। এর আগের অর্থবছরে হয়েছিল ৩ হাজার ৬১৫ কোটি ডলারের। অর্থাৎ, সর্বশেষে সমাপ্ত অর্থবছরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

এদিকে আগস্টে কেবল পোশাক খাতেই নয়, সার্বিকভাবে দেশে সব পণ্যের রপ্তানি কমেছে। ইপিবির তথ্য বলছে, গত আগস্টে দেশে সব ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩৯২ কোটি ডলারের, আগের বছরের একই মাসে যা হয়েছিল ৪০৩ কোটি। অর্থাৎ, বছরের ব্যবধানে গত মাসে সব ধরনের পণ্য রপ্তানি কমেছে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, ট্রাম্প সরকারের পাল্টা শুল্কনীতি ঘোষণার পর শুরুতে কিছুটা অস্থিরতা তৈরি হলেও পরে সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে এখনই সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, এখনই উদ্যোগ না নিলে এই সম্ভাবনা হাতছাড়া হয়ে যাবে।

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ভারত থেকে যে অর্ডার সরে বাংলাদেশে আসবে, তা পূরণ করার মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। তবে সক্ষমতা থাকলেই হবে না, উৎপাদন করার মতো লজিস্টিক সাপোর্ট থাকতে হবে। বর্তমানে সেই সাপোর্টটা বাংলাদেশের নেই। বিশেষ করে এখনই জ্বালানির প্রয়োজন। কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরকার দিতে পারছে না। অর্ডার এলেও সাপ্লাই দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। এ ছাড়া শ্রমিক অসন্তোষ উৎপাদন ব্যাহত করছে। এর বাইরে রয়েছে পণ্য খালাসে বন্দরের ভোগান্তি। শ্রমিক অস্থিরতা ঠেকানো ও বন্দরের অটোমেশন না হলে এই সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাবে না বল মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

এদিকে নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আমাদের সময়কে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। পাশাপাশি নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখা দরকার। হঠাৎ করে রপ্তানি কমার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, গত জুলাই মাসে পোশাক রপ্তানি ভালো হয়েছে। ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কনীতি ঘোষণার পর অনেক ক্রেতার মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়। ফলে অনেক ক্রেতা অর্ডার বাতিল করে দিয়েছিল। এরই প্রভাব আগস্টে পড়তে পারে। তবে সম্ভাবনা কাজের লাগাতে হলে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে।

জানতে চাইলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান (বাবলু) গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, যুক্তরাষ্টের পাল্টা শুল্ক আরোপের কারণে ক্রেতা ও কারখানা মালিকদের মধ্যে পোশাকের দরদাম নিয়ে নতুন করে দরকষাকষি করতে হয়েছে। এ ছাড়া উভয় পক্ষ অস্বস্তিতে ছিলেন। ফলে অর্ডারও কমেছিল। এ কারণে রপ্তানি কমেছে। তবে আগামী দিনে পরিস্থিতি ঘুরে যাবে বলে আশা করছি।

ইনামুল হক খান বলেন, ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ বহাল থাকলে আমরা লাভবান হব। ভারত চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর থেকে শুল্ক কমানোর সম্ভাবনা থাকবে না। এটা আমাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন এই উদ্যোক্তা।