২৬ শটের নাটকীয় টাইব্রেকার শেষে চতুর্থ স্তরের দলের কাছে ম্যানইউর হার
নিঃশ্বাস বন্ধ করা এক টাইব্রেকার, যা চলেছিল যেন অনন্তকাল! শেষ পর্যন্ত ২৬তম শটে গিয়ে মিলল নিষ্পত্তি। ব্রায়ান এমবুমোর শটটি ক্রসবারে লেগে ফিরে আসতেই উৎসবে ফেটে পড়ে গ্রিমসবি টাউনের ফুটবলাররা। বাঁধভাঙা উল্লাসে মাতেন তারা, আর গ্যালারির ৯ হাজার দর্শক যেন আনন্দে ভেসে যান। ১৫০ বছরের বেশি পুরোনো ক্লাবটির ইতিহাসে এমন স্মরণীয় এক মুহূর্ত অনেক দিন পর এলো।
অন্যদিকে, হতাশায় ডুবে যায় ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। একের পর এক ব্যর্থতার মাঝে এবার তারা গড়ল এক অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড—ক্লাবের ইতিহাসে প্রথমবার তারা হেরে গেল চতুর্থ স্তরের একটি ক্লাবের কাছে।
ইংলিশ লিগ কাপের এই ম্যাচটি জন্ম দিয়েছে এক ঐতিহাসিক ফলের। ম্যাচের ৭৫ মিনিট পর্যন্ত ২-০ গোলে পিছিয়ে ছিল ইউনাইটেড। পরে দুই গোল করে সমতা ফেরালেও শেষ পর্যন্ত ২৬ শটের সেই নাটকীয় টাইব্রেকারে ১২-১১ গোলে জয় পায় গ্রিমসবি টাউন এফসি।
ম্যানচেস্টার থেকে ১২০ মাইল দূরের ছোট্ট শহর ক্লিসথর্পসের ক্লাব গ্রিমসবি টাউন, যাদের প্রতিষ্ঠা ১৮৭৮ সালে। এক সময় ইংলিশ ফুটবলে মোটামুটি পরিচিত নাম হলেও এখন তারা লড়ছে চতুর্থ স্তরের লিগে। একসময় এফএ কাপের সেমিফাইনাল (১৯৩৮-৩৯) কিংবা লিগ কাপের কোয়ার্টার ফাইনাল (১৯৭৮-৭৯) পর্যন্ত গিয়েছিল তারা। এবার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে মাঠে দেখা গেল ৭৭ বছর পর।
তবে মাঠে দাপট দেখিয়েছে এই ছোট ক্লাবই। মাত্র ৩০ মিনিটেই এগিয়ে যায় ২-০ গোলে। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে সেই ব্যবধান ধরে রাখে। দ্বিতীয়ার্ধে আরও একবার বল জালে পাঠায় তারা, যদিও অফসাইডের কারণে সেই গোল বাতিল হয়।
৭৫তম মিনিটে ব্রায়ান এমবুমোর গোলে ইউনাইটেড ম্যাচে ফেরে। ৮৯তম মিনিটে হ্যারি ম্যাগুইয়ার হেডে স্কোরলাইন সমতায় ফেরে। এরপরই শুরু হয় টাইব্রেকার—প্রথম পাঁচ শটে দুই দলই সফল, ৪-৪। এরপর একে একে সব খেলোয়াড় এমনকি গোলকিপাররাও শট নেন। ১৮ মিনিটের এই রুদ্ধশ্বাস পেনাল্টি শুটআউটের অবসান ঘটে এমবুমোর দ্বিতীয় শট মিসে।
গ্রিমসবির গোলরক্ষক ক্রিস্টি পিম নিজেও ম্যান ইউনাইটেডের সমর্থক। প্রিয় ক্লাবকে বিদায় দিতে একটু কষ্ট পেলেও, নিজের দলের বিজয়ে উচ্ছ্বসিত তিনি।
তার কথায়, ‘এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না! আমি ইউনাইটেডের ভক্ত, তাই মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। তবে ফুটবল তো এমন রাতের জন্যই খেলা হয়। অসাধারণ এক জয়।’
আরও যোগ করেন, ‘টাইব্রেকারে আরও ভালো করতে পারতাম। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেভ করেছি, যা দলকে ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছে। বাকি কাজটা ছেলেরা করে দিয়েছে। দুর্দান্ত এক জয়!’
এই ম্যাচ শুধু একটি জয় নয়, বরং ইংলিশ ফুটবলে ‘ডেভিড বনাম গোলিয়াথ’-এর আরেকটি অবিস্মরণীয় অধ্যায়।