৩০ কোটি বই ছাপার বিশাল কর্মযজ্ঞ

শিক্ষার্থীর হাতে ১ জানুয়ারি বই পৌঁছে দিতে দৌড়ঝাঁপ এনসিটিবির

এম এইচ রবিন
২৬ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
৩০ কোটি বই ছাপার বিশাল কর্মযজ্ঞ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্যালেন্ডারে নভেম্বর-ডিসেম্বর মানেই অস্থিরতার ঋতু। জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনা-অস্থিরতা প্রায় নিয়মিত ঘটনা। সেই আঁচ পড়ে শিক্ষা খাতেও; বিশেষত বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানো ও সরবরাহ কার্যক্রমে। দীর্ঘদিন ধরে ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার প্রথা চলছে। কিন্তু নির্বাচনকেন্দ্রিক অস্থিরতা বারবার এই মহাযজ্ঞকে বিঘ্নিত করে। এবার অবশ্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) পরিস্থিতি আগেভাগেই আঁচ করেছে। তাই এনসিটিবির লক্ষ্য- নভেম্বরের মধ্যেই ছাপাখানা থেকে বই জেলা-উপজেলায় পৌঁছে দেওয়া।

এ প্রসঙ্গে এনসিটিবির সচিব প্রফেসর মোঃ সাহতাব উদ্দিন গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের জন্য এটি বড় চ্যালেঞ্জ। একদিকে নির্বাচন, অন্যদিকে বই বিতরণের জাতীয় দায়িত্ব। শিক্ষার্থীরা যেন ১ জানুয়ারি নতুন বই হাতে পায়, সেজন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’

ছাপাখানার ব্যস্ততা ও ঝুঁকি : প্রতিবারের মতোই বছরের শেষ দিকে ছাপাখানাগুলোয় ব্যস্ততা বাড়ে ক্যালেন্ডার-ডায়েরি ছাপানোর। এবার তাতে যুক্ত হচ্ছে নির্বাচনী পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন। ফলে বাড়তি চাপে পড়তে হচ্ছে প্রেস মালিকদের।

বাংলাবাজারের একজন প্রেসমালিক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা সাধারণত অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করি। কিন্তু এবার আগস্টেই অর্ডার এসেছে। রাত-দিন সমান তালে বই ছাপাচ্ছি। নির্বাচনী সময়ে শ্রমিক সংকট, পরিবহন জট- সব মিলিয়ে ঝুঁকি থাকে।’

বাংলাবাজারের দি আর্ট প্রেসের মেশিন অপারেটর মো. আসাদ খান বলেন, ‘এখন প্রেসগুলোয় কিন্ডারগার্টেন ও অন্যান্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বই ছাপানো চলছে। সবাই চেষ্টা করছে নভেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করতে। কারণ নির্বাচনী কাজ আর কাগজের দামের ঊর্ধ্বগতি দুই-ই সামনে।’

শিক্ষাবিদদের সতর্কবার্তা : শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্মরণ করিয়ে দেন, ২০১৩ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকালে সহিংসতার কারণে অনেক জেলায় বই পরিবহন ব্যাহত হয়েছিল। কোথাও কোথাও গুদামে আগুন লাগার ঘটনাও ঘটেছে।

তার মতে, এবার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলেও রাজনৈতিক কর্মসূচি নভেম্বর থেকেই তীব্র হয়ে উঠতে পারে। তাই এনসিটিবিকে এখনই পুরো টেন্ডার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে হবে।

ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মো. সিকান্দার আলী খান বলেন, শিক্ষার্থীরা নতুন বছরের প্রথম দিনে নতুন বই হাতে পেয়ে যে আনন্দ পায়, সেটি তাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়ায়। তাই বই বিতরণ কর্মসূচি সময়মতো সম্পন্ন হওয়া খুব জরুরি।

এনসিটিবির হিসাবে, চলতি বছর প্রায় ৩০ কোটি কপি পাঠ্যবই ছাপানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরে ২১ কোটি ৪৩ লাখের বেশি এবং প্রাথমিক স্তরে ৮ কোটি ৫৯ লাখ। ধাপে ধাপে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

বাংলাদেশে বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণ আজ এক বৈশ্বিক উদাহরণ। কোটি কোটি শিশু বছরের প্রথম দিন বই হাতে পেয়ে কেবল শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছে না, বরং একটি রাষ্ট্র তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে। কিন্তু এই মহৎ আয়োজনের ওপর যখন নির্বাচনী উত্তেজনার ছায়া পড়ে, তখন ঝুঁকিতে পড়ে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ। এবার আগাম প্রস্তুতি নেওয়ায় আশা করা যায়- রাজনীতির ডামাডোল পেরিয়েও ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা পাবে নতুন বইয়ের সুবাস।