৯ প্যানেলের শীর্ষপদে প্রার্থী যারা

রাকিবুল ইসলাম
২৫ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
৯ প্যানেলের শীর্ষপদে প্রার্থী যারা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরগরম ঢাবি ক্যাম্পাস। জুলাই অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ নির্বাচন বিশেষ তাৎপর্যবাহী। সঙ্গত কারণেই পুরো দেশের দৃষ্টি এখন ডাকসু নির্বাচনের দিকে। এবারের নির্বাচনে মোট ৯টি প্যানেল রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ, ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট, প্রতিরোধ পর্ষদ, সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ, ছাত্র অধিকার পরিষদ, অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন এবং স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেল। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এসব প্যানেল থেকে ভিপি ও জিএস পদপ্রার্থী হিসেবে কারা নামছেন নির্বাচনী লড়াইয়ে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল থেকে ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সাংগঠনিক দক্ষতা তাকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রমেই জনপ্রিয় করে তুলছে। জিএস প্রার্থী তানভীর বারী হামিম উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি কবি জসীম উদ্দীন হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক। গতিশীল নেতৃত্বের জন্য পরিচিত এই ছাত্রনেতা। ছাত্রদলের প্যানেলে প্রার্থী হিসেবে সংখ্যালঘু ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি সংগঠনটির বৈচিত্র্যময় প্রতিনিধিত্বের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরেছে।

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ কোটা সংস্কার আন্দোলনের পটভূমিতে তাদের শক্তিশালী উপস্থিতি জানান দিয়েছে। এ প্যানেল থেকে ভিপি পদপ্রার্থী আব্দুল কাদের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির (বাগছাস) ঢাবি শাখার আহ্বায়ক। তীক্ষè রাজনৈতিক সচেতনতার জন্য তিনি বেশ পরিচিত। আগে ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আব্দুল কাদের। জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার ভূতত্ত্ব বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি বাগছাসের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক। জুলাই অভ্যুত্থানে সমন্বয়ক হিসেবে তার ভূমিকা সর্বজনবিদিত। এ প্যানেল থেকে পাঁচ নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট

ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বে গঠিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট আলোচনায় আছে তাদের শিক্ষার্থীবান্ধব নীতির জন্য। বৈষম্যমুক্ত ক্যাম্পাসের প্রতিশ্রুতি সামনে রেখে নির্বাচনে নেমেছে এ প্যানেল। ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক। জিএস প্রার্থী এসএম ফরহাদ সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য সমাদৃত এই ছাত্রনেতা শিবিরের ঢাবি শাখা সভাপতি। এ প্যানেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী ও আদিবাসী শিক্ষার্থীদের প্রার্থী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রতিরোধ পর্ষদ

বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট প্রতিরোধ পর্ষদ তাদের প্রগতিশীল এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছে। ভিপি প্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী। ২০১৯ সালে শামসুন নাহার হলের ভিপি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। নারী শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাকে আলাদা করে তুলেছে। জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার সভাপতি। তিনি তার বামপন্থি আদর্শের জন্য পরিচিত। এই প্যানেলে ১১ জন নারী ও তিনজন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রার্থী রয়েছেন, যা তাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ।

সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ

সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ নতুন রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছে। ভিপি প্রার্থী জামাল উদ্দীন খালিদ আরবি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য পরিচিত এই ছাত্রনেতা স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক। জিএস প্রার্থী মাহিন সরকার বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সাবেক যুগ্ম সদস্য সচিব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে জুলাই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এ প্যানেল তরুণদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।

ছাত্র অধিকার পরিষদ

ছাত্র অধিকার পরিষদের সেøাগান ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ, ভোট ফর চেঞ্জ’। ভিপি প্রার্থী বিন ইয়ামিন মোল্লা লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী এবং পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি। তিনি তার দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের জন্য পরিচিত। জিএস প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী এবং পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি। গতিশীল নেতৃত্বের জন্য আলোচিত সাবিনা। তাদের ১৬ সদস্যের প্যানেল ক্যাম্পাসে ব্যাপক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এবং ছাত্রলীগ-বিসিএলের সমন্বিত প্যানেল অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪ তাদের প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মাঠে নেমেছে। ভিপি প্রার্থী নাইম হাসান হৃদয় সমাজসেবামূলক কাজের জন্য পরিচিত। যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের এই শিক্ষার্থী এবং বিসিএল ঢাবি শাখার সভাপতি। জিএস প্রার্থী এনামুল হাসান অনয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী এবং ছাত্র ইউনিয়নের শিক্ষা ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক।

সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন তাদের ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল নিয়ে নৈতিক ও শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভিপি প্রার্থী ইয়াসিন আরাফাত ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি সংগঠনের ঢাবি শাখার সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। জিএস প্রার্থী খায়রুল আহসান মারজান আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক।

স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেল নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছে। ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী এবং কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তিনি তার সাহসী ভূমিকার জন্য আলোচিত। জিএস প্রার্থী আল সাদী ভূঁইয়া নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি।

প্রসঙ্গত, ডাকসুর ২৮টি পদে ৫০৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে, যা নির্বাচনের প্রতিযোগিতামূলক প্রকৃতি প্রকাশ করছে। এ নির্বাচন ক্যাম্পাসের গ-ি ছাড়িয়ে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনায় উঠে এসেছে। প্রতিটি প্যানেলের প্রার্থীরা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের মন জয় করার চেষ্টায় চালিয়ে যাচ্ছেন। কোন প্যানেলের কোন প্রার্থী হাসবেন শেষ হাসি, সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।