ওয়াংখেড়েতে গাভাস্কারের ভাস্কর্য, অমর এক ক্রিকেট মুহূর্তের স্মারক

স্পোর্টস ডেস্ক
২৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:৪০
শেয়ার :
ওয়াংখেড়েতে গাভাস্কারের ভাস্কর্য, অমর এক ক্রিকেট মুহূর্তের স্মারক

মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের মূল ফটক পেরিয়ে ঢুকলেই এখন স্বাগত জানাচ্ছেন সুনীল গাভাস্কার—ব্যাট উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি, ঠিক যেন খেলোয়াড়ি জীবনের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে ফিরে গেছেন। এটি কোনো কল্পনা নয়, বরং কিংবদন্তি ক্রিকেটারকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে একটি ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য। এই কৃতিত্বপূর্ণ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে তার ১০ হাজার রানের ঐতিহাসিক মাইলফলক ছোঁয়ার দৃশ্যকে স্মরণ করে।

ভারতীয় ক্রিকেটে অবিস্মরণীয় অবদান রাখা গাভাস্কারের নাম আগে থেকেই জড়িয়ে আছে ওয়াংখেড়ের ইতিহাসে। কিন্তু এবার তাকে সম্মান জানাতে স্টেডিয়াম চত্বরে স্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হলো এই ভাস্কর্য। ফলে কেবল স্মৃতিচারণ নয়, সরাসরি চোখে পড়বে ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়ের চিত্র।

মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এমসিএ) যখন ‘শারদ পাওয়ার ক্রিকেট মিউজিয়াম’-এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করল, ঠিক তখনই এই ভাস্কর্য উন্মোচনের আয়োজনও রাখা হয়। নিজেকে ঘিরে এমন আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন গাভাস্কার নিজে, সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী, ছেলে রোহান গাভাস্কার, পুত্রবধূ ও নাতিনাতনিরাও।

আগামী বছর গাভাস্কারের ওয়াংখেড়েতে শেষ টেস্ট খেলার ৪০ বছর পূর্ণ হবে। তবে এখনও এই মাঠে তার রেকর্ড অনন্য। ১১টি টেস্টে ৫৬.১০ গড়ে ১,১২২ রান করা গাভাস্কার ওয়াংখেড়েতে সর্বোচ্চ রানের মালিক। তার পাঁচটি সেঞ্চুরি—যা এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাটার স্পর্শ করতে পারেননি।

গাভাস্কারের সাফল্যের পরিধি অবশ্য শুধু মুম্বাইয়ে সীমাবদ্ধ ছিল না। টেস্ট অভিষেক সিরিজেই ক্যারিবিয়ান বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে ৭৭৪ রান করে তিনি টেস্ট ইতিহাসে নিজের উপস্থিতি জানান দেন। সেই রেকর্ড আজও অটুট। সেখান থেকে তার পথচলা শুধু উপরের দিকেই গেছে—সংখ্যায় হার মানলেও ব্যাটসম্যান হিসেবে শ্রদ্ধা পেয়েছেন সবসময়।

ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য হিসেবে ১৯৮৩ সালে ইতিহাস গড়েন তিনি। পরে ১৯৮৫ সালের ‘মিনি বিশ্বকাপ’ নামক ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব ক্রিকেটে দলের অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা জেতান ভারতকে। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে তাই তার নামটি জড়িয়ে আছে গর্বের সঙ্গে।

মুম্বাইয়ের সন্তান গাভাস্কার সবসময় নিজেকে একজন ‘গর্বিত মুম্বাইকার’ হিসেবে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। বোম্বে দলের হয়ে ৭৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ২২টি শতকে তার সংগ্রহ ৫,৮৯৮ রান। তাই নিজের শহরের মাঠে স্থায়ীভাবে স্মরণীয় হয়ে ওঠা—তার জন্য আবেগঘন এক উপলক্ষ।

ভাস্কর্য উদ্বোধনের পর সংবাদমাধ্যমে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি গাভাস্কার। বললেন, “আমি সত্যিই ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এই সম্মান আমাকে অভিভূত করেছে। মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ছিল আমার ক্রিকেট জীবনের সঙ্গী, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। এমন স্বীকৃতি সবসময় পাওয়া যায় না।”

ভাস্কর্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ হাজার রান পূর্ণ করার ঠিক সেই মুহূর্তটি, যেখানে অফ স্পিনার ইজাজ ফাকিহর একটি ডেলিভারিকে থার্ডম্যান অঞ্চলে কাট করে ব্যাট উঁচিয়ে উদযাপন করেছিলেন গাভাস্কার। দুই রান নেয়ার পর দর্শকদের উচ্ছ্বাসে খেলা বন্ধও হয়ে গিয়েছিল কিছুক্ষণ। সেই স্মৃতিই চিরস্থায়ী রূপ পেল ভাস্কর্যে।

যদিও ঐতিহাসিক ওই ইনিংসটি এসেছিল আহমেদাবাদে, এমসিএর সভাপতি আজিঙ্কা নায়েক মনে করেন, উদযাপনের দৃশ্যটাই ছিল সবচেয়ে উপযুক্ত চিত্র। তিনি বলেন, “গাভাস্কার নিজেই কয়েকটি ছবি দেখিয়েছিলেন। আমি বুঝে গেছি—এটিই তার সেরা মুহূর্ত, এবং ভারতীয় ক্রিকেটেরও।”

গাভাস্কার জানান, এই ভাস্কর্য দেখেই তিনি যেন ফিরে গেলেন সেই ঐতিহাসিক দিনে। “আমার চোখে ভাসছে, সেই বলটি করা হলো, আমি কীভাবে কাট করেছিলাম। স্মৃতির পটে আবার ফিরে গেলাম সেই দিনটিতে।”

জাদুঘরটির নাম রাখা হয়েছে ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনীতিক শারদ পাওয়ারের নামে। মুম্বাই ক্রিকেটে দীর্ঘদিন অবদান রাখা এই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী, আইসিসি ও এমসিএর প্রাক্তন সভাপতিও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন। তার সম্মানেও রয়েছে একটি ভাস্কর্য।

সাধারণ দর্শকদের জন্য ‘শারদ পাওয়ার ক্রিকেট জাদুঘর’ খুলে দেওয়া হবে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে। এরই মধ্যে গাভাস্কার উপহার দিয়েছেন তার দুটি স্মরণীয় ক্যাপ। দিলিপ ভেংসরকার দিয়েছেন ১৯৭৬ সালের ঐতিহাসিক লর্ডস টেস্টে পরা জার্সি। রোহিত শর্মা দিয়েছেন ২০২৩ বিশ্বকাপের নিজের জার্সি ও ব্যাট। ভবিষ্যতে আরও বহু ঐতিহাসিক স্মারক যুক্ত হয়ে জাদুঘরটি হয়ে উঠবে ভারতীয় ক্রিকেটের অনন্য এক আর্কাইভ।