সবজির বাজারে আগুন
বাজারে চাল থেকে শুরু করে মাছ, মাংস, পেঁয়াজসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম আগের তুলনায় বাড়তি। এ তালিকায় এখন যুক্ত হয়েছে সবজি। বাজারে বেশির ভাগ তরিতরকারি এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকার ওপরে। চলতি সপ্তাহে নতুন করে বেড়েছে মুরগি ও ডিমের দাম। একের পর এক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষের সংসারে খরচের চাপ বেড়েছে। বাজার খরচ সামাল দিতে কষ্টে রয়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ।
গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সকাল সকাল রাজধানীর সাদ্দাম মার্কেটে সবজির বাজারে এসে পকেটে টান পড়েছে বেসরকারি চাকরিজীবী এনামুল হকের। তার বাজারের তালিকায় নানা পদের তরিতরকারি থাকলেও বাদ দিতে হয়েছে বেশ কয়েক পদ। কথা হলে কদমতলী তুষারধার আবাসিক এলাকার এ বাসিন্দা বলেন, প্রায় প্রতিটি সবজির দামই ৮০-১০০ টাকা। কমের মধ্যে শুধু পেঁপে আর মিষ্টি কুমড়াই আছে। এমনকি কাঁচাকলার হালিও ৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি, পেঁয়াজ ও ডিম কেনার পর কিছু টাকা হাতে ছিল, সেটা দিয়ে সবজি কিনতে এসেছি। কিন্তু দুই পদের সবজি আর কাঁচামরিচ কিনতেই পকেট খালি। সবজির বাজারেও এত খরচ হলে, আমাদের মতো আয়ের মানুষ টিকবে কিভাবে।
একই বাজারের আরেক ক্রেতা অটোরিকশাচালক মো. কাজল মিয়া বলেন, অটো চালিয়ে যে সামান্য আয় হয়, তা দিয়ে মাছ-মাংস কিনে খাওয়া অনেক কঠিন। তরিতরকারির ওপরেই টিকে থাকতে হয় আমাদের। এখন সেই সবজি কিনতেও অনেক বেশি খরচ করতে হচ্ছে। সামান্য লাল শাঁকের আটিও ২০-২৫ টাকা। এমনটা হলে সংসার চালাবো কীভাবে।
এ বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. কিরণ বলেন, একদিকে সবজির মৌসুম শেষ। অপরদিকে বৃষ্টিবাদল রয়েছে। এসব কারণে সবজির সরবরাহ কম, দামও অনেক বাড়তি রয়েছে। পাইকারিতেই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে আমাদের। বর্তমানে পেঁপে আর মিষ্টি কুমড়া ছাড়া সব পদের তরিতরকারির কেজি ৭০-৮০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর খুচরা বাজারে গতকাল শুক্রবার প্রতি কেজি করলা ও বরবটি ১০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। বেগুনের দাম আরও বাড়তি। বাজারভেদে গোল বেগুন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। লম্বা বেগুনের কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা। কিছুদিন আগে যে ঢেঁড়সের কেজি ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এখন তা ৮০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ঝিঙা, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল ও পটোলের কেজি ৮০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কচুর লতি। শশার কেজিও ৮০ টাকা। টমেটোর কেজি এখন ১৮০ টাকা। লাউয়ের পিস ৭০ টাকা এবং চালকুমড়ার পিস ৬০ টাকার নিচে মিলছে না। কমের মধ্যে
পেঁপের কেজি ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা এবং কাঁচাকলার হালি ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর কাঁচামরিচের কেজি এখন ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
সবজির বাড়তি দাম নিয়ে কথা হলে কারওয়ানবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী রিয়াদ এন্টারপ্রাইজের বলরাম চন্দ্র বলেন, মূলত সবজির মৌসুম শেষ। নতুন মৌসুমের সবজির সরবরাহও কম। কারণ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টি হলে ক্ষেতে সবজির ক্ষতিসাধন হয়। এ সময় দামও বাড়তি থাকে। আবহাওয়া ঠিকঠাক থাকলে দাম কিছুটা কমে আসবে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
এদিকে পেঁয়াজের দামে এখন পকেট পুড়ছে ভোক্তার। গতকাল খুচরায় দেশি পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে। খুচরায় দাম চড়া থাকলেও পাইকারিতে কমছে বলে জানান শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা।
শ্যামবাজারের পাইকার কানাই সাহা বলেন, পেঁয়াজ আমদানির খবরে পাইকারিতে দাম ১০ থেকে ১২ টাকা কমে গেছে। কিন্তু খুচরায় দাম কেন কমছে না, সেটা খুচরা ব্যবসায়ীরাই ভালো জানেন। হয়তো তাদের কাছে বাড়তি দামের কেনা পেঁয়াজ এখন রয়ে গেছে।
অন্যদিকে চালের বাজারে খরচ সামাল দিতে খেই হারিয়ে ফেলছেন ভোক্তারা। নতুন করে বাড়ছে মোটা চালের দাম। কিছুদিন আগে ৫৫ টাকা বিক্রি হওয়া মোটা চাল এখন ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। অপরদিকে সরু চালের মধ্যে মিনিকেট চাল ৮০ টাকার নিচে মিলছে না। নাজিরশাইলের দাম আরও বেশি।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে মাংসের বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেড়ে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগির দামও বাড়তি রয়েছে। অপরদিকে ডিমের দামও এ সপ্তাহে নতুন করে বেড়েছে। ফার্মের বাদামি ডিমের ডজন এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। গত সপ্তাহের শুরুতে যা ১৪০-১৪৫ টাকা বিক্রি হয়েছে।