চট্টগ্রাম বন্দরের অফডকে বাড়তি চার্জে উদ্বেগ
কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের চার্জ বাড়াচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক ২১টি বেসরকারি অফডক। বন্দরের বাইরে অবস্থিত এবং বন্দরের অতিরিক্ত অংশ হিসেবে বিবেচিত এই বেসরকারি কনটেইনার ইয়ার্ডগুলোতে খালি ও পণ্যবোঝাই উভয় ধরনের কনটেইনারে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন ট্যারিফ কার্যকর হবে। কনটেইনার স্টাফিং, গ্রাউন্ড রেন্ট (কনটেইনার রাখার ভাড়া), লিফট অফ-লিফট অন, ডকুমেন্টেশন এবং বন্দর থেকে অফডকগামী যানবাহনের পরিবহন চার্জ ৩০ পথকে ৬৩ শতাংশ বাড়ছে, টাকার অঙ্কে যা ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।
তবে সক্ষমতা না বাড়িয়ে এই হারে ট্যারিফ বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ও পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। চিঠিতে বলা হয়েছে, অফডক হচ্ছে বন্দরের অতিরিক্ত অংশ। তাই অফডকে ট্যারিফ বাড়লে এর প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। পাশাপাশি বাংলাদেশের রপ্তানি খাতকে আরও সংকটময় করে তুলবে।
জানা গেছে, বন্দরের ওপর চাপ কমাতে ১৯৯৬ সাল থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল বেসরকারি অফডকের। প্রথম পর্যায়ে খালি কনটেইনার, দ্বিতীয় পর্যায়ে রপ্তানি এবং সবশেষে ৭ দফায় ৬৮ ধরনের পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার অনুমতি পায় অফডক। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আমদানি বাণিজ্যের ৬৮ ধরনের পণ্য ২১টি অফডক থেকে খালাস নেওয়া বাধ্যতামূলক। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানির শতভাগ এখান থেকেই জাহাজীকরণ সম্পন্ন হয়।
তথ্য বলছে, সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭ লাখ ৭৭ হাজার রপ্তানি এবং ২ লাখ ৬৫ হাজার আমদানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে বেসরকারি অফডকগুলোতে। নতুন ট্যারিফ কার্যকর হলে বছরে খরচ বাড়বে অন্তত এক হাজার কোটি টাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিজিএমইএ, শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাফা ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা। আর তাই ট্যারিফ সংশোধনের জন্য তারা অফডকগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) চিঠিও দিয়েছে বিকডার কাছে। তাদের চিঠির জবাবে পাল্টা চিঠি দিয়েছে বিকডা।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ আমাদের সময়কে বলেন, অফডকগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত অংশ; ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রভাব পুরো অর্থনীতিতে পড়বে। একটি ক্রাইসিস সময়ে ট্যারিফ বাড়ানোর উপযুক্ত সময় নয়। কোনো স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া ট্যারিফ বাড়ানো উচিত হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের ব্যবসা এমনিতেই বাড়ছে। আগে ৩৮ ধরনের হলেও বর্তমানে ৬৮ ধরনের পণ্য অফডক থেকে খালাস বাধ্যতামূলক।
তিনি বলেন, আমরা চিঠি দিয়েছিলাম; পাল্টা চিঠিতে ডিপো মালিকরা বলেছে, ট্যারিফ বাড়াতেই হবে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ট্যারিফ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে; এর আগে বার্থ অপারেটররা বাড়িয়েছিল, অফডক বাড়ালে তখন শিপিং এজেন্টরাও বাড়াতে বাধ্য হবে- যা সর্বশেষ ভোক্তার ঘাড়ে পড়বে। বিষয়টি নিয়ে বন্দরকে আমরা মধ্যস্থতা করতে বলেছি।
বিজিএমইএর পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, সেবার মান না বাড়িয়ে ট্যারিফ বাড়ানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে। টাস্কফোর্স গঠন করে যৌথভাবে আলোচনা করে যৌক্তিক পরিমাণ ট্যারিফ নির্ধারণ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাত আন্তর্জাতিক ও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। চলমান মধ্যপ্রাচ্য সংকট, শ্রমিক অসন্তোষ, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদের হার, জ¦ালানি সংকট, পরিবহন খরচ বৃদ্ধিসহ পণ্য উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে খরচ বেড়েছে। ফলে রপ্তানিকারকরা কারখানা প্রতিষ্ঠান চালাতে নীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের সক্ষমতা ধরে রাখতে ব্যয় সাশ্রয়ে রপ্তানিসংক্রান্ত চার্জ বৃদ্ধি করা সমীচীন হবে না।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান খায়রুল আলম সুজন বলেন, বেসরকারি অফডকগুলোর সক্ষমতা না বাড়িয়ে ট্যারিফ বাড়ানোর কোনো কারণ নাই। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা সেবার দাম বাড়ানোর যুক্তি নাই। আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সভা অনুষ্ঠিত হবে; আমরা সেখানে বিষয়গুলো তুলে ধরব।
এদিকে সেবাগ্রহণকারী বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ট্যারিফ না বাড়ানোর আবেদনের চিঠি পেলেও নিজেদের সিদ্ধান্তে এখনও অনড় অবস্থানে রয়েছে বিকডা। এক্ষেত্রে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যের তারতম্যের তথ্য তুলে ধরছেন বিকডা কর্মকর্তারা।
বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ইউএস ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়েছে। ফলে বেসরকারি অফডকগুলো আগের মতো মাশুল পাচ্ছে না। এর সঙ্গে অপারেশনাল খরচ, শ্রমিক ব্যয় ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডিপোগুলোকে চার্জ পুনঃনির্ধারণ করতে হয়েছে। সবশেষ ২০২১ সালে তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে ২৩ শতাংশ হারে ট্যারিফ বাড়িয়েছিল বিকডা।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
এদিকে বিকডার ট্যারিফ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে অংশীজনরা যেমন বন্দরের দ্বারস্থ হয়েছেন, তেমনি নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে বিকডা।