পুঁজিবাজারে আসছে বহুজাতিক ও রাষ্ট্রীয় লাভজনক কোম্পানি
দীর্ঘদিনের ভালো শেয়ারের ঘাটতি কাটাতে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এবার সরাসরি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানি ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের বহুল প্রতীক্ষিত চাহিদা পূরণ হতে যাচ্ছে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পুঁজিবাজারে ভালো শেয়ার সরবরাহে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে পূরণ হতে চলেছে বিনিয়োগকারী, বাজার মধ্যস্থতাকারী ও বিশেষজ্ঞদের দীর্ঘদিনের দাবি। এক্ষেত্রে বহুজাতিক কোম্পানিসহ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন লাভজনক মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তিন স্তরে পুরো বিষয় কার্যকর করা হবে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারে ভালো শেয়ারের বড়ই অভাব। ৫ বছর আগেও যেসব শেয়ার ভালো ছিল, সেগুলোও আজ মন্দ হয়ে গেছে। বিশেষ করে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বিদ্যুৎ সেক্টরের শেয়ার ভালো থেকে মন্দ শেয়ারে রূপান্তর হয়েছে। অথচ বহুজাতিক কোম্পানির পাশাপাশি দেশেরও অনেক ভালো কোম্পানি রয়েছে, যেগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা এসব লাভজনক শেয়ার তালিকাভুক্তির নির্দেশনা দিয়েছেন। এ বিষয়ে একাধিক বৈঠকও হয়েছে। চিহ্নিত হয়েছে ভালো কোম্পানি। এসব কোম্পানি সরাসরি তালিকাভুক্তির পরামর্শ দেন তিনি। জানা গেছে, দেশের পুঁজিবাজারে
ভালো কোম্পানির শেয়ারের বেশ ঘাটতি রয়েছে। বর্তমানে ২০ থেকে ২৫টির বেশি ভালো কোম্পানির নাম বলা যায় না। তাই বাজারে ভালো কোম্পানি ও শেয়ারের সংখ্যা বাড়ানো খুবই জরুরি মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। স্টেকহোল্ডারদের সবাই বিষয়টি স্বীকার করলেও দীর্ঘসময় ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। ফলে দুই যুগ ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে দেশের শেয়ারবাজার।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
জানা গেছে, ১৫ বছর ধরে দেশের পুঁজিবাজারে চরম অনিয়ম, অপশাসন ও অস্থিরতা চলছে। ফলে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান প্রায় অকার্যকর। কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যর্থতায় রূপ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকৃত রিটার্ন এবং মূলধন কমেছে। প্রকৃত অর্থে বাজার প্রায় ৪০ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। তালিকাভুক্ত হয়েছে মানহীন আইপিও (প্রাথমিক শেয়ার)। এর মাধ্যমে বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। বাজারে তৈরি হয় স্থায়ী তারল্য সংকট। নিয়ন্ত্রক সংস্থা, পরিচালনাকারী সংস্থা, তালিকাভুক্ত কোম্পানি, বাজার মধ্যস্থতাকারী এবং আর্থিক নিরীক্ষক, রেটিং এজেন্সিসহ অন্যান্য অংশীজনের মাঝে দেখা দেয় সুশাসনের অভাব।
পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলেন, এ দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি নিশ্চিত করা জরুরি। কোম্পানিগুলোরও উচিত দায়বদ্ধতা থেকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া। তবে বহুজাতিক কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলছেন, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে তারা বাড়তি সুবিধা পান না। বিদ্যমান করহার বেশি, তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াও জটিল। ফলে অর্থায়নের বিকল্প উৎস থাকতে তারা শেয়ারবাজারে আসতে চান না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা গত ১৫ বছরে ১৩৪টি প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তি অনুমোদন করেছে। কিন্তু কোম্পানিগুলো ভালো ফল বয়ে আনতে পারেনি। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই তালিকাভুক্ত হওয়ার পর মুনাফা করার সক্ষমতা কমেছে। ফলে তাদের জেড ক্যাটাগরিতে (মন্দ খাতে) নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম জানান, ঝুঁকি হ্রাসের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো নতুন শেয়ারের জোগান বাড়ানো। বর্তমান সরকার থাকতেই সরকারি কিছু ভালো কোম্পানির সঙ্গে বহুজাতিক এবং বেসরকারি খাতের বড় কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনতে হবে। প্রয়োজনে আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপ করারও পরামর্শ দেন তিনি।
ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির উদ্যোগ : আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে বেশকিছু কোম্পানির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানিসহ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন লাভজনক মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোর সরাসরি তালিকাভুক্তি-সংক্রান্ত তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ যাতে ব্যবস্থা নেয়, সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিএসইসি ও আইসিবিকে। এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অন্য কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য বিবেচিত হলে এ প্রক্রিয়ায় কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বিএসইসিকে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার জন্য একটি অর্ডিন্যান্স বা আইন প্রণয়ন করতে হবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিএসইসিকে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম