পুতিনের কৌশলী ফাঁদে পা দিয়েছেন ট্রাম্প

আমাদের সময় ডেস্ক
১৯ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
পুতিনের কৌশলী ফাঁদে পা দিয়েছেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকটা ছিল যেন এক অসাধারণ নৈপুণ্যের নমুনা। এক সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা কীভাবে নিজের প্রভাব খাটানোর কৌশল ব্যবহার করে এক আত্মপ্রেমী নেতাকে প্রভাবিত করতে পারেন, তার নমুনা ছিল এটি।

কিয়েভভিত্তিক এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক আল জাজিরাকে বলেছেন, শুক্রবার ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠক দেখে তার এমনটাই মনে হয়েছে। ওই বিশ্লেষক ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিশ্লেষক বলেন, ‘পুতিন ট্রাম্পকে ভালোভাবেই সামলেছেন।’ ওই বিশ্লেষক পূর্ব জার্মানিতে সোভিয়েত গুপ্তচর হিসেবে পুতিনের কাটানো বছরগুলোর দিকে ইঙ্গিত করেন। তখন তিনি গুপ্তচরবৃত্তির জন্য লোকজন সংগ্রহ করতেন।

আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের রাজধানী আঙ্কোরেজের কাছে এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন ঘাঁটির রানওয়েতে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প ও পুতিন পরস্পরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পুতিন তখন বলেন, ‘শুভ সকাল, প্রিয় প্রতিবেশী।’ এর মধ্য দিয়ে আলাস্কা যে ভৌগোলিকভাবে উত্তর-পূর্ব রাশিয়ার খুব কাছে অবস্থিত, তা ইঙ্গিত করেছেন তিনি।

পুতিনকে অভ্যর্থনা জানাতে ট্রাম্প তার জন্য লালগালিচা বিছিয়েছিলেন। তিনি পুতিনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন এবং তাকে প্রেসিডেন্টের জন্য নির্ধারিত গাড়ি ‘দ্য বিস্ট’-এ চড়িয়েছেন। ওই গাড়িতে বসে পুতিনকে আনন্দিত দেখাচ্ছিল।

সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বারবার ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বৈঠক, ইউক্রেন ইস্যু এবং সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির ব্যাপারে প্রায়ই ট্রাম্পের মুখে শোনা কথাগুলো পুতিনের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। যেমন পুতিন বলেছেন, তিনিও মনে করেন যে ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ হতো না।

পুতিন বলেন, ‘ট্রাম্প বললেন, যদি তিনি তখন প্রেসিডেন্ট হতেন, যুদ্ধ হতো না। আমি নিশ্চিত, এটা সত্য।’

কিয়েভভিত্তিক ওই বিশ্লেষক মনে করেন, পুতিন চতুর প্রশংসা দিয়ে ট্রাম্পকে প্রভাবিত করেছেন। আর তাতে প্রভাবিত হয়েই ট্রাম্প বলে দিলেন, ‘চূড়ান্ত চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো চুক্তি নেই।’

ওই বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘পুতিন একজন আত্মপ্রেমী মানুষকে প্রভাবিত করার জন্য যা লাগে, সবই করেছেন। বারবার উদ্ধৃতি দিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট যা বলেছেন তা বারবার তুলে ধরেছেন এবং ট্রাম্পের আগ্রহের বিষয়গুলোর ওপর বারবার জোর দিয়েছেন।’

কিয়েভভিত্তিক বিশ্লেষক ইগার টাইশকেভিচ আল জাজিরাকে বলেন, ‘রাশিয়া অর্থনীতি ও ভূরাজনৈতিক কৌশল ব্যবহার করছে, তারা ট্রাম্পকে তাৎক্ষণিক সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে এবং চীনকে নিয়ন্ত্রণের বিষয়েও দরকষাকষি করছে। এর ভিত্তিতে ক্রেমলিন এমন রাজনৈতিক সুবিধা চাইছে, যা ভূরাজনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।’

ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর জেনারেল স্টাফের সাবেক উপপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রোমানেনকো আল জাজিরাকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক হওয়ার মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, পুতিন সেখানে ‘বৈধতা’ পেয়েছেন। তার রাজনৈতিকভাবে ‘একঘরে’ অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে।