ঝুঁকিতে শাহজালালে বিমান চলাচল
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বার্ড হিটের ঘটনা বাড়ছে। বিমান ওঠা-নামার সময় বারবার পাখির সঙ্গে ধাক্কা লাগছে। দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরটিতে পাখি তাড়াতে নেই কোনো আধুনিক প্রযুক্তি। বিমানবন্দরে বার্ড শুটারের পাঁচটি পদ আছে। কিন্তু কর্মরত আছেন মাত্র একজন। তার ব্যবহারের জন্যও নেই কোনো বন্দুক। ২০ বছর ধরে আইনি জটিলতায় অস্ত্রও কেনা যাচ্ছে না। ফলে বিশাল এলাকায় পাখি তাড়ানোর কাজ হচ্ছে না। এতে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণে ঝুঁকি বাড়ছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানায়, গত ২০ বছরেও প্রতিষ্ঠানটির নামে কোনো অস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়া যায়নি। এ অবস্থায় বিমান চলাচলের ঝুঁকি কমাতে তারা বিমান বাহিনীর সহযোগিতা চাইছে। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থার (আইসিএও) নিয়ম অনুযায়ী, বিমান ইঞ্জিন বা ডানায় পাখির ধাক্কা বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। এ ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোর বিমানবন্দরে বার্ড শুটার, শব্দবোমা, লেজার ডিভাইসসহ নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ‘হাডসন রিভার মিরাকল’ ঘটনায় যাত্রীবাহী একটি বিমান উড্ডয়নের পর পরই দুটি ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায় পাখির ধাক্কায়। পাইলট জরুরি অবতরণ করে দুর্ঘটনা এড়ান। বিমান বন্দর সূত্রে জানা গেছে, শাহজালালে প্রায় প্রতিদিনই পাখির আঘাতের ঝুঁকি নিয়ে ফ্লাইট চলছে। পাইলটদের দক্ষতায় শতাধিক ফ্লাইট জরুরি অবতরণ করেছে। প্রাণহানি বা বড় দুর্ঘটনা হয়নি। তবে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। শীতকালে বিমানবন্দর রানওয়ের আশপাশে পাখির উপদ্রব আরও বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
বিমান চলাচল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের পর উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে পাখি ঢুকলে বড় ক্ষতি হতে পারে। ইঞ্জিনের ফ্যান, ব্লেড ও স্পিনার ভেঙে ইঞ্জিন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে পাইলটরাও মানসিক চাপে থাকেন। এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, বিমানবন্দরে পাখি তাড়ানোর মনিটরিং খুব দুর্বল।
বেবিচককে পাঠানো বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের চিঠিতে বলা হয়েছে- বিমানবন্দরে উড্ডয়ন ও অবতরণের সংখ্যা বেড়েছে। সঙ্গে পাখির উপদ্রবও বাড়ছে। পাঁচটি অনুমোদিত পদের বিপরীতে একজন বার্ড শুটার আছেন। তার জন্য কোনো বন্দুক নেই। নতুন শুটার নিয়োগ ও বন্দুক সংগ্রহ দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ। তাই আপাতত বিমান বাহিনী ঘাঁটি একে খন্দকার থেকে মৌখিক অনুরোধে বার্ড শুটারের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। চিঠি থেকে আরও জানা গেছে, এই সহায়তাও সীমিত। সকাল ৮টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। শুক্রবার, শনিবার ও সরকারি ছুটির দিনে বিমানবাহিনী না থাকায় শুটারও থাকে না। অথচ সূর্যোদয়ের পর থেকে রাত পর্যন্ত পাখির উপদ্রব অব্যাহত থাকে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
গত ২১ জুলাই ওয়াইল্ডলাইফ হ্যাজার্ড মনিটরিং কমিটির সভায় প্রতিদিন (ছুটির দিনসহ) সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শুটারের সহায়তা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বিমানবাহিনী সদর দপ্তর জানায়, নিয়ম অনুযায়ী এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল অফিসার না থাকলে শুটার গুলি চালাতে পারবেন না। এ কারণে প্রতিদিন পুরো সময় বার্ড শুটারের সহায়তা নিশ্চিত করতে নতুন সমঝোতার চেষ্টা চলছে।
জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস. এম. রাগীব সামাদ আমাদের সময়কে বলেন, চরম বার্ড শুটার সংকট চলছে। বিমানবাহিনীর সহযোগিতা নিচ্ছি। তবে শুক্র ও শনিবার তারা সহায়তা দেয় না। ২০ বছর ধরে অস্ত্র কেনা যাচ্ছে না আইনি জটিলতায়। তিনি আরও বলেন, বিমানবন্দরের আশপাশে বড় বড় ডাস্টবিন আছে। খাবারের উচ্ছিষ্ট খেতে পাখি আসে। এতে ঝুঁকি তৈরি হয়। ডাস্টবিন সরাতে সিটি করপোরেশনকে বলেছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তারা।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম