নিরাপদ পানি নিশ্চিতে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প
খুলনার নদনদী ও খালগুলোর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছে। এতে ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে জলাধারের পানি। লবণাক্ততা বাড়ছে কৃষিজমিতেও। ফলে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও উজান থেকে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় নোনাপানির আধিক্য বাড়ছে। এতে খরা মৌসুম দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ভূ-পৃষ্ঠের পানি সরবরাহের মাধ্যমে এই অঞ্চলে নিরাপদ পানি নিশ্চিত এবং পাইপযুক্ত পানি সরবরাহ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সেই লক্ষ্যে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
পরিকল্পনা কমিশনসূত্র জানিয়েছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সারা বছর পাইপলাইনের মাধ্যমে খুলনা অঞ্চলের মানুষের জন্য নিরাপদ ও পর্যাপ্ত সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে লবণাক্ততা কবলিত এলাকাগুলোতে সুপেয় পানির সংকট নিরসনে এই প্রকল্প বিশেষভাবে কাজ করবে। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে প্রায় এক হাজার ৮২১ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য আগামী রবিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উত্থাপন করা হবে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করবেন বলে জানা গেছে। একনেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে চলতি ২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০৩০ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে খুলনা ওয়াসা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের উদ্দেশ্য- খরা মৌসুমে খুলনা শহরে নিরাপদ ও পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিতে ভূ-পৃষ্ঠের পানি সরবরাহের মাধ্যমে বিদ্যমান পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি করা এবং যেসব এলাকায় পাইপযুক্ত পানি সরবরাহ নেই সেসব এলাকায় সরবরাহের কভারেজ সম্প্রসারণ করা। এর আওতায় খুলনা সিটি করপোরেশনের বিদ্যমান এলাকা এবং সম্প্রসারিত এলাকায় পাইপলাইন পানি সরবরাহ পরিষেবা সম্প্রসারণ করা হবে। একই সঙ্গে সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এবং সারফেস ওয়াটার রিজার্ভারের ক্ষমতা বাড়ানো হবে। এতে শুষ্ক মৌসুমে পরিপূর্ণ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
কমিশনসূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের এই প্রকল্পের মাধ্যমে সারা বছর ধরেই গুণগতমানসম্পন্ন পানি সরবরাহ নিশ্চিতে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বিকাশ করা হবে। বিশেষ করে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও স্মার্ট মনিটরিং সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে পানি সরবরাহ উন্নত এবং আধুনিক পানি সরবরাহ ব্যবস্থা পরিচালনায় খুলনা ওয়াসার কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
প্রকল্পের পটভূমি-খুলনা ওয়াসা বর্তমানে বিদ্যমান সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের উৎপাদিত পানি এবং নলকূপ থেকে
ভূ-গর্ভস্থ পানি দিয়ে গ্রাহকদের চাহিদার শতভাগ পূরণ করে। কিন্তু খুলনা অঞ্চলে খরা মৌসুমে (এপ্রিল ও মে) জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মধুমতি নদীর পানিতে লবণাক্ততা দেখা দেয়। বর্তমানে খুলনা ওয়াসা মধুমতি নদী থেকে প্রায় ১০ মাস নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে পারে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্বাভাবিক নিরাপদ পানি সরবরাহ বছরের দুই মাস (এপ্রিল ও মে) ব্যাহত হয়। এ সময়ে গ্রহণযোগ্য লবণাক্ততার সীমা প্রতি লিটারে ৬০০ মিলিগ্রাম থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৬০০ মিলিগ্রাম হয়। ফলে খুলনাবাসীকে কাক্সিক্ষত মানের পর্যাপ্ত নিরাপদ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। খুলনা মহানগরীতে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর জন্য সারা বছর সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যে খুলনা ওয়াসা থেকে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকা-খুলনা সিটি করপোরেশন ও খুলনা জেলার রূপসা উপজেলা এবং বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলায় বাস্তবায়ন হবে।
এলাকা নির্বাচনের যৌক্তিকতায় বলা হচ্ছে, খুলনা শহর ৪৫.৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত। খুলনা মহানগরীর এলাকার সঙ্গে আরও ৩টি নতুন থানা লবণচরা, হরিণটানা ও আড়ংঘাটা অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বর্ধিত এলাকায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহের আওতায় নিয়ে আসা এবং ইতোমধ্যে পানি সরবরাহকৃত এলাকায় সারা বছর নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে এলাকা নির্বাচন করা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বৈদেশিক অর্থায়নের সুবিধার্থে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল