গণঅভ্যুত্থানের পরে আমাদের প্রেরণা যুগিয়েছিল মালয়েশিয়া: ড. ইউনূস
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের গত বছরের ঢাকা সফর সদ্য রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে উত্তরণের সময়ে বাংলাদেশকে এক বড় ধরনের মানসিক প্রেরণা যুগিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মালয়েশিয়া সফরকালে গতকাল বুধবার দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা বারনামাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। অধ্যাপক ইউনূস বারনামাকে বলেন, ‘আনোয়ার ইব্রাহিমের এই সফর বাংলাদেশের কঠিন সময়ে জাতির মধ্যে আশার সঞ্চার করেছিল।’
বারনামা আজ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে। বারনামার প্রধান সম্পাদক আরুল রাজু দুরার রাজের নেতৃত্বে সংস্থাটির একদল সাংবাদিক এই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে।
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট থেকে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ইউনূস সাক্ষাৎকারে ছাত্র জনতার নেতৃত্বে কীভাবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন তা স্মরণ করেন। এ সময়ে বাংলাদেশ যে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছিল, তা তুলে ধরেন তিনি।
এই পরিস্থিতিকে ‘ম্যাগনিচিউড ৯’ ভূমিকম্পে আঘাত হানা অবস্থার সঙ্গে তুলনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সবকিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, ভীষণ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি, কিছুই চলছিল না- শুধু ক্ষোভ ফুঁসে উঠছিল।’
আরও পড়ুন:
‘হামাসকে ধ্বংস করা যাবে না’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের এমন এক কঠিন সময়ে দেশ চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এটা ছিল অত্যন্ত কঠিন কাজ। শুধু বিশৃঙ্খলা দূর করাই নয়, সবকিছু নতুন করে গড়ে তুলতে হয়েছে। আমরা তখন পথ খুঁজছিলাম, কীভাবে এগোবো— এমন সময়ে সুখবর এল, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশে সফরে আসছেন।’
বারনামাকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে নোবেল বিজয়ী ইউনূস আনোয়ার ইব্রাহিমের সেই সফর নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। আনোয়ার ইব্রাহিম ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ সফর করেন। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দুই মাসের মাথায় তিনিই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি নেতা হিসেবে বাংলাদেশ সফর করেন।
এ সময় ড. ইউনূস বলেন, ‘তিনি আমাদের আশা দিয়েছিলেন। তার সফর জনগণের মধ্যে বিপুল উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছিল। মালয়েশিয়া বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুব পরিচিত একটি দেশ, কারণ এখানে বহু বাংলাদেশি বসবাস করেন এবং তাদের পরিবারও এখানে রয়েছে। এটি কোনো অজানা-অচেনা দেশ নয়। তাই মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এসে বললেন, হ্যাঁ, আমরা তোমাদের পাশে আছি—এটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য অনেক অর্থবহ ছিল। তার উপস্থিতি খুবই উৎসাহব্যঞ্জক ও অনুপ্রেরণাদায়ক ছিল।’
৮৫ বছর বয়সী ইউনূস একজন অর্থনীতিবিদ ও সামাজিক উদ্যোক্তা। তিনি ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশে দরিদ্র বিশেষত নারীদের জন্য জামানতবিহীন ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের লক্ষ্যে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। মালয়েশিয়া বাংলাদেশের বাইরে প্রথম দেশ হিসেবে আমানাহ ইখতিয়ার মালয়েশিয়া প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক মডেল গ্রহণ করে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
ইউনূস ১১ থেকে ১৩ আগস্ট মালয়েশিয়ায় তিন দিনের সরকারি সফরে আসেন। এ সময় তিনি মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি বিশেষ করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শ্রম, শিক্ষা, পর্যটন ও প্রতিরক্ষা খাত, এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়ে পর্যালোচনা করতে আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠক করেন।
তিনি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে দেশটির বিভিন্ন খাতের নেতৃবৃন্দ এবং বড় বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ইউনূস বলেন, ‘আমি বলতে পারি, আমাদের সফরটি দারুণ ও অত্যন্ত সফল হয়েছে। আমরা এই সফর নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। সবাই তাদের সময় নিয়ে খুব উদার ছিলেন। আমরা যেসব কর্মকর্তা, নেতা ও ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম, সবাই এগিয়ে এসেছেন।’
অধ্যাপক ইউনূস আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, ‘এই সফর দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করবে এবং পারস্পরিক উপকারী ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা সম্প্রসারিত করবে, যা ১৯৭২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
দক্ষিণ এশিয়ায় মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ও রপ্তানি গন্তব্য বাংলাদেশ। এর প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য, পাম তেল ও রাসায়নিক দ্রব্য, আর আমদানি পণ্য হলো টেক্সটাইল, জুতা, পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য ও প্রস্তুত পণ্য। ২০২৪ সালে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ বাণিজ্য ৫.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৩.৩৫ বিলিয়ন রিঙ্গিত (২.৯২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।