সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ আবশ্যক
সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধন করে ভোট বাতিলের পাশাপাশি ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা পেতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও করা হয়েছে। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশৃঙ্খলামুক্ত ভোটানুষ্ঠানে এবং ভোটারদের আস্থা-সংকট কাটাতে ইসির এই ক্ষমতা বৃদ্ধি ইতিবাচক। তবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনের যথাযথ প্রয়োগও আবশ্যক। পাশাপাশি সরকার ও বড় রাজনৈতিক দলের আচরণও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। প্রসঙ্গত, গত ১১ আগস্ট গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন কমিশন।
আরপিও সংশোধন প্রসঙ্গে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক আমাদের সময়কে বলেন, শুধু নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। পারিপাশির্^ক অবস্থা যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল না হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করার সাধ্য নেই। ভোট সুষ্ঠু হবে কি না, তা নির্ভর করে সরকার, বড় রাজনৈতিক দলসহ পারিপাশির্^ক পরিস্থিতির ওপর।
সুপ্রিমকোর্টের এই আইনজীবী আরও বলেন, ক্ষমতায়নের সুফল আছে, কুফলও আছে। অধিক ক্ষমতাশালী হলে আপনি সদ্ব্যবহার করবেন, নাকি অসৎ ব্যবহার করবেন; তার ওপর নির্ভর করে ফল। ইসি নিজেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করছে, এর সদ্ব্যবহার হলে অবশ্যই ভালো। আবার অপব্যবহার হলে খারাপ। এটা সময়ই বলে দেবে।
এদিকে আরপিওতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকেও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। কমিশন অন্যান্য বাহিনীর মতো সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নামাতে পারবে। বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. আব্দুল আলীম। তিনি বলেন, ইসির বেশির ভাগ সংশোধন আমাদের সংস্কার কমিশনের সুপারিশে রয়েছে। এটা ভালো উদ্যোগ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কারণ সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা আছে মানুষের। যখন সেনাবাহিনী মাঠে থাকে তখন কিন্তু মানুষেরও আস্থা থাকে যে, ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভালোভাবে ভোট দিয়ে আসা যাবে। এটি ইতিবাচক। এর ফলে মানুষের আস্থা বাড়বে বলে মনে করি। সেক্ষেত্রে নির্বাচন ভালো হবে।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিচালক ড. আব্দুল আলীম আরও বলেন, ভোট বাতিল করার ক্ষমতা পাচ্ছে ইসি। যখন অনিয়ম হবে তখন পুরো সংসদীয় আসনের ভোট বাতিল করতে পারবে। এটা নির্বাচন কমিশনকে অনেকটা ক্ষমতাশালী করবে। তিনি যোগ করেন, শুধু আইন করলে হবে না। কঠোর মনিটরিং লাগবে। নির্বাচন কমিশনকে কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
ইসি সচিবালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা হলে কিংবা ফলাফলে কারসাজি করলে নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। কিন্তু এটা যেন নিরপেক্ষভাবে প্রয়োগ করা হয়। তিনি বলেন, আইনে আসলে সব আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না, কার্যকর হয় না। এই জায়গাটায় কাজ করলে বিশৃঙ্খলা কমে আসবে।
জেসমিন টুলি বলেন, আসলে ভোট সুষ্ঠু হয় পরিবেশ, রাজনৈতিক দলগুলো কেমন অংশগ্রহণ করছে, তাদের আচরণ কেমন, নির্বাচন কমিশন কেমন- এসব বিষয়ের ওপর। এ ছাড়া যারা দায়িত্ব পালন করেন, তাদের আচরণের ওপর। শুধু আইন দিয়ে তো নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব নয়।
গত ১১ আগস্ট গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০২৫, এর খসড়া অনুমোদন করেছে ইসি। সংশোধনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- পুরো আসনের ভোট ও ফল বাতিলের ক্ষমতা চায় ইসি, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ শেষ, থাকছে ‘না’ ভোট, জোট করলেও ভোট করতে হবে নিজ দলের প্রতীকে, লটারির মাধ্যমে ভোটের ফলাফল নির্ধারণ নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীর অন্তর্ভুক্তি, হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে বাতিল হবে এমপি পদ, এআই অপব্যবহার হলে মিডিয়াও আসবে শাস্তির আওতায়, নারীদের বুলিং নয় ইত্যাদি।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ গত সোমবার বলেন, আশা করছি আরপিওর খসড়া আগামী সপ্তাহ আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠাতে পারব।
সরকারের অনুমোদন পেলে সংশোধিত আইনটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করবে সরকার। সেই আলোকে অনুুষ্ঠিত হবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন