শিক্ষক নিয়োগে প্রি-সার্ভিস প্রশিক্ষণ চালু হচ্ছে

প্রাথমিকে শিক্ষকদের মানোন্নয়নের নতুন উদ্যোগ

এম এইচ রবিন
১২ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
শিক্ষক নিয়োগে প্রি-সার্ভিস প্রশিক্ষণ চালু হচ্ছে

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের আগে প্রার্থীদের জন্য প্রি-সার্ভিস প্রশিক্ষণ চালুর ভাবনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ)। এই কোর্সে ক্লাসরুম ব্যবস্থাপনা, শিশু মনোবিজ্ঞান, পাঠ পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন, সহশিক্ষা ও সুরক্ষা শেখানো হবে। যা নিয়োগের পর নয়, বরং আগেই সম্পন্ন করতে পারবেন শিক্ষক হতে আগ্রহী প্রার্থীরা। দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য এটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে চ্যালেঞ্জ হবে সঠিক পরিকল্পনা ও অর্থায়ন সমন্বয় করা। প্রশিক্ষণের ব্যয় মেটাতে শহর থেকে গ্রামের প্রার্থীদের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকবে। কোর্সটি অনলাইন ও অফলাইনের সমন্বয়ে হাইব্রিড মডেল করার মত বিশেষজ্ঞদের।

নেপ মহাপরিচালক ফরিদ আহমদ গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরিতে প্রবেশের পর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আমরা চাকরিপূর্ব প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী বছরের শুরুতে পাইলটিং আকারে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনার সম্পূর্ণ নীতিমালা চূড়ান্ত হয়নি উল্লেখ করে নেপ মহাপরিচালক জানান, প্রাথমিক আলোচনায় আসছে, আগামী বছর জানুয়ারি মাসে ১০টি প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) এ প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হবে। কোর্সের মেয়াদ হতে পারে ১০ মাস। প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহীরা নির্দিষ্ট ফি দিয়ে কোর্স সম্পন্ন করবেন। ফি এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।

যেসব প্রার্থী এ কোর্সসম্পন্ন করবেন, তারা কী সুবিধা পাবেন- এ প্রশ্নে নেপের কর্মকর্তা জানান, যারা চাকরিপূর্ব প্রশিক্ষণ নেবেন, আমরা ধরে নেব তারা প্রাথমিকের শিক্ষক হওয়ার জন্য এ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার কী হবে- সেটির রূপ পুরো নীতিমালা চূড়ান্ত করার পর জানা যাবে।

নেপের এ উদ্যোগে সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, উন্নত দেশের অনেক শিক্ষাব্যবস্থায় প্রি-সার্ভিস প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। এখানে সহকারী শিক্ষক পদে শুধু ডিগ্রি থাকলেই নিয়োগ দেওয়া হয়, পরে ইন-সার্ভিস প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রি-সার্ভিস শিক্ষকতা প্রশিক্ষণ চালু হলে দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য সেটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে বলে মনে করি। এ প্রশিক্ষণ চালু হলে শিক্ষকরা শুরু থেকেই পাঠদানে প্রস্তুত হয়ে আসবেন। এতে প্রাথমিক শিক্ষার মান দ্রুত উন্নত হতে পারে। নতুন উদ্যোগ পাইলটিং হওয়ার পর নিশ্চয়ই এর ত্রুটিবিচ্যুতি নজরে এলে সমাধান হবে।

তবে প্রি-সার্ভিস শিক্ষক প্রশিক্ষণ বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জও কম নয়- প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও প্রশিক্ষক সংকট, পাঠ্যসামগ্রী প্রস্তুতি, ব্যয়ভার ও সময়সীমা বড় বাধা হতে পারে বলে জানান শিক্ষাবিদ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রফেসর মোহাম্মদ কায়কোবাদ। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণের ব্যয় মেটাতে শহর থেকে গ্রামের প্রার্থীদের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকবে। এ ক্ষেত্রে দরিদ্র প্রার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সীমিত ভর্তুকি বা স্টাইপেন্ড প্রদান করা; হাইব্রিড মডেল : অনলাইন তত্ত্বীয় পাঠ সঙ্গে নিকটবর্তী স্কুলে ব্যবহারিক অনুশীলন করার সুযোগ থাকা দরকার।

তার মতে, শুধু সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য নয়, এতে কার্যকর শিখন-মূল্যায়ন, শ্রেণিকক্ষে পর্যবেক্ষণ, ব্যবহারিক অনুশীলন এবং পরবর্তী মেন্টরিং থাকতে হবে। প্রি-সার্ভিস প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন করতে পারলে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন দেশের বেশির ভাগ শিক্ষাব্যবস্থা প্রি-সার্ভিস শিক্ষাদানে জোর দেয়। যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে শিক্ষক হওয়ার পথে স্বীকৃত কোর্স পোস্ট গ্র্যাজুয়েট সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন (পিজিসিই) বা স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রি একটি ধাপ হিসেবে বিবেচিত। বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে প্রি-সার্ভিস ব্যবস্থা ভিন্নভাবে আছে; কোনো দেশে ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক, আবার কোথাও সহকারী পদে কেবল উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ডিগ্রি থাকলেই নিয়োগ দেওয়া হয় এবং পরে ইন-সার্ভিস প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর ভিন্নতা আছে, একক মডেল নেই। প্রতিটি দেশের প্রেক্ষাপট, শিক্ষা খাতে বাজেট ও মানবসম্পদ অনুযায়ী তৈরি করা হয় প্রশিক্ষণনীতি।