সাত বছর পর ক্রিকেটে ফিরলেন জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক

স্পোর্টস ডেস্ক
০৯ আগস্ট ২০২৫, ১৪:২৯
শেয়ার :
সাত বছর পর ক্রিকেটে ফিরলেন জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সাড়ে সাত বছরের বিরতি, বয়স প্রায় ৩৯—সব কিছুই বলছিল ক্যারিয়ার শেষের গল্প। কিন্তু গ্রায়েম ক্রেমার লিখছেন এক নতুন অধ্যায়। অনেকের অবসরের বয়সে তিনি শুরু করেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার লড়াই।

সাবেক এই জিম্বাবুয়ান অধিনায়ক সম্প্রতি ফিরেছেন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে। ন্যাশনাল প্রিমিয়ার লিগে তাকাসিংহা প্যাট্রিয়টস ওয়ান ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে নিজের প্রথম দুই ম্যাচেই তুলে নিয়েছেন ৪টি করে উইকেট। ৪৫ ওভারের ম্যাচগুলোতে ৪৩ ও ৪৪ রান দিয়ে তার এই সাফল্য অনেককে মনে করিয়ে দিয়েছে পুরোনো ক্রেমারকে। এর মধ্য দিয়ে এখন তিনি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।

ক্রেমারকে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে দেখা গিয়েছিল ২০১৮ সালের মার্চে, ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে। একই বছরের ডিসেম্বরে স্বীকৃত ক্রিকেটের শেষ ম্যাচটি খেলেন তিনি, এরপর দীর্ঘ বিরতি। তার আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল ২০০৫ সালে, বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে। ওই সিরিজেই জিম্বাবুয়ে পেয়েছিল প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ। পরে তিনি খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষেও। জিম্বাবুয়ে টেস্ট ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হলে থেমে যায় টেস্ট যাত্রা।

ক্রেমারের নেতৃত্বে ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত খেলেছে জিম্বাবুয়ে। নেতৃত্ব দিয়েছেন ৮ টেস্ট, ৩৫ ওয়ানডে ও ৫ টি-টোয়েন্টিতে। শ্রীলংকার বিপক্ষে অধিনায়ক হিসেবে টেস্ট সেঞ্চুরিও আছে তার ঝুলিতে।

তবে ২০১৮ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর জিম্বাবুয়ে ছিটকে পড়ে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে, এবং ক্রেমারের জীবনও নেয় নতুন মোড়। স্ত্রীর সঙ্গে চলে যান দুবাইয়ে, যিনি একজন পাইলট। সংসার ও সন্তানদের দেখভালের জন্য ক্রিকেট থেকে সরে যান তিনি।

সেই বিরতি চলে যায় সাত বছরেরও বেশি সময়। এর মাঝে অবশ্য একেবারে বিচ্ছিন্ন ছিলেন না ক্রিকেট থেকে—কখনও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোচিং স্টাফে, কখনও রাজস্থান রয়্যালস ক্রিকেট একাডেমির পরিচালক হিসেবে যুক্ত থেকেছেন। পাশাপাশি সময় দিয়েছেন গলফ খেলাতেও।

এখন আবার নিজেকে পরিচয় দিচ্ছেন ক্রিকেটার হিসেবে। ঘরের মাঠ কোয়েকোয়ে স্পোর্টস ক্লাবে ফিরে ক্রেমার বলেছেন, ‘ফিরে আসতে পারাটা অসাধারণ। এটা আমার নিজের মাঠ ছিল, সেই পুরোনো পরিবেশে আবার খেলতে পেরে খুব ভালো লাগছে। ক্লাবের পরিবেশও দারুণ, সবাই আমাকে দারুণভাবে গ্রহণ করেছে।’

ফেরার ম্যাচে তার সঙ্গী ছিলেন আরেক সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডান টেইলর। মাদক ও অ্যালকোহলের আসক্তি থেকে বের হয়ে দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞা শেষে ফিরেছেন তিনিও। সেদিন ৬৩ রান করেন টেইলর, আর তাকে আবার পাশে পেয়ে আবেগাপ্লুত ক্রেমার বলেন, ‘আমরা অনেক দিন একসঙ্গে খেলেছি। তার সঙ্গে আবার মাঠে নামা, কথা বলা, খেলা ভাগাভাগি করা—সবকিছুই দারুণ অভিজ্ঞতা।’

ক্রেমার ও টেইলর, দুজনেরই চোখ এখন ভবিষ্যতের দিকে। লক্ষ্য ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ, যা অনুষ্ঠিত হবে জিম্বাবুয়ের মাটিতেই। ২০১৫ সালের পর আর কোনো ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলেনি জিম্বাবুয়ে, গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তো উগান্ডার কাছে হেরে বাছাইও উতরাতে পারেনি তারা।

তাই দেশের ক্রিকেটে নতুন প্রাণ দিতে, তরুণদের পাশে অভিজ্ঞ কাঁধ রাখতে আবারও ফিরছেন ক্রেমার ও টেইলর। বয়স বাড়লেও তাড়না যেন আরও প্রবল—জিম্বাবুয়ের জার্সিতে শেষ অধ্যায়টা লিখে যেতে চান নিজের মতো করে।