বিমানের সঙ্গে কুকুরের ধাক্কায় তোলপাড়

গোলাম সাত্তার রনি
০৪ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
বিমানের সঙ্গে কুকুরের ধাক্কায় তোলপাড়

শনিবার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যা। ৭২ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েতে ছুটে চলছিল বেসরকারি এয়ার এস্ট্রার একটি উড়োজাহাজ। উড্ডয়নের আগমুহূর্তে ঘটে যায় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। চলন্ত উড়োজাহাজের সঙ্গে রানওয়েতে চলে আসা একটি কুকুরের ধাক্কা লাগলে জরুরি ব্রেক কষতে হয় পাইলটকে। এতে উড়োজাহাজের চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে কুকুরটি মারা গেলেও বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় বিমানযাত্রীরা। তবে জরুরি ব্রেকে সৃষ্ট

ঝাঁকুনিতে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় যাত্রী ও পাইলটরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এর আগেও কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েতে পশু-পাখির সঙ্গে ফ্লাইটের ধাক্কা লেগেছে। গত শনিবারের ঘটনায় আবারও এই বিমানবন্দরের রানওয়েতে উড়োজাহাজের নিরাপদ উড্ডয়ন ও অবতরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

জানা গেছে, সেদিন কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েতে উড়োজাহাজের সঙ্গে কুকুরের ধাক্কা লাগার ঘটনায় ফ্লাইটটি ছাড়তে এক ঘণ্টা দেরি হয়। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের দল রানওয়েতে দ্রুত ছুটে যায় এবং মৃত কুকুরটি সরিয়ে নেয়। পরে রাত ৮টার দিকে উড়োজাহাজটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) এক কর্মকর্তা জানান, দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন নগরী কক্সবাজার। প্রতিদিনই শত শত পর্যটক বিমানে করে ছুটে আসেন বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের টানে। কিন্তু কক্সবাজার বিমানবন্দরে পশু-পাখি তাড়ানোর জন্য যন্ত্রপাতি ও বার্ড শুটার না থাকায় ঝুঁকিতে রয়েছে বিমান চলাচল।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, এর আগেও কক্সবাজার বিমানবন্দরে একাধিকবার রানওয়েতে কুকুর বা বন্যপ্রাণীর প্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। ২০২১ সালে উড্ডয়ন করতে গিয়ে বিমানবন্দরের রানওয়েতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজের ধাক্কায় দুটি গরু মারা যায়। রানওয়েতে গরু কীভাবে এসেছে, বিষয়টি নিয়ে ওই সময় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এসব ঘটনায় কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বিমানবন্দর চত্বরে এখনও নিয়মিতভাবে কুকুর ও গবাদি পশুর বিচরণ চোখে পড়ে।

বিমানবন্দরে পশু-পাখি তাড়ানোর জন্য বার্ড শুটার ও কোনো যন্ত্রপাতি না থাকার কথা স্বীকার করেছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরের পরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) মো. গোলাম মোর্তজা হোসেনও। জানতে চাইলে আমাদের সময়কে তিনি বলেন, রানওয়েতে কুকুর বেশি নেই। কন্সট্রাকশন কাজ চলছে, তাই কিছু কুকুর আছে। এরা মাঝেমধ্যে রানওয়েতে ঢুকে যায়। বিমানবন্দরের বাউন্ডারি দেয়ালের কিছু কিছুু জায়গায় কাজ চলছে, সেসব জায়গা দিয়ে এগুলো ঢুকে পড়ে। মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পশু-পাখি তাড়ানোর প্রযুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম মোর্তজা বলেন, আমাদের কোনো বার্ড শুটার নেই। বেবিচক সদর দপ্তরের কাছে চাওয়া হয়েছে। বার্ড শুটাররা কুকুরসহ পশু-পাখি তাড়ানোর কাজ করে। তবে এখানে পাখির উপদ্রব সেভাবে নেই। আশপাশের এলাকা থেকে কিছু কুকুর চলে আসে। সীমানা দেয়াল মেরামতের জন্য নিয়মিত চিঠি দেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, শনিবারের ঘটনায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, তাই কমিটি করা হয়নি। ওই ঘটনার পর কুকুর ও পশু-পাখি তাড়ানো এবং দেয়ালগুলো মেরামতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, কুকুর বা অন্য যে কোনো বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি বিমান চলাচলের জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করে। এ জন্য রানওয়ে ও এপ্রোন এলাকা সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ রাখা জরুরি। এ ধরনের প্রাণী বিমানের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালে বড় ধরনের প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। আইকাও-এর নির্দেশনা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাখি ও প্রাণী তাড়ানোর ব্যবস্থা থাকে। একে বলা হয় ‘বার্ড শুটার’।

এ ছাড়া যন্ত্রপাতিও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কক্সবাজার বিমানবন্দরে কোনো বার্ড শুটার বা আধুনিক প্রাণী তাড়ানোর প্রযুক্তি নেই। অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যাবে। এ ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কোনো বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মান অর্জন করতে পারে না। কক্সবাজার বিমানবন্দরের এই অব্যবস্থাপনা দেশের পর্যটন শিল্পের জন্যও হুমকি হতে পারে।