সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ

আবু আলী
০৩ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ

আমেরিকার বাজারে পণ্য প্রবেশে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় শুল্কহার কম থাকায় সন্তোষজনক অবস্থানে বাংলাদেশ। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোও লবিং অব্যাহত রেখেছে। ফলে শুল্ক ইস্যুতে সরকারকে মার্কিন সরকারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ অর্থাৎ কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে সুযোগ কাজে লাগাতে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত বাড়তি শুল্কের হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর ভারতের পণ্যে বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়। এ ছাড়া পাকিস্তানের জন্য করা হয়েছে ১৯ শতাংশ। এতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের সক্ষমতার সুযোগ খুবই কম। এ ক্ষেত্রে ইউটিলিটি এফিশিয়েন্সি, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং লজিস্টিক এফিশিয়েন্সি- এ তিনটি কাজ অব্যাহতভাবে করে যেতে হবে। আর উদ্যোক্তারা বলছেন, পাল্টা শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারে তৈরি পোশাকের চাহিদা কিছুটা কমতে পারে। এর পরও রপ্তানি বৃদ্ধির বড় সুযোগ তৈরি হবে। কারণ চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক থাকায় সেখান থেকে প্রচুর কার্যাদেশ সরবে। তার একটা অংশ পেতে পারে বাংলাদেশ। আর ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক থাকায় সেটি বড় আকারেও হতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে আমেরিকার বাজারে পণ্যের দাম কিছুটা বাড়বে। এতে চাহিদা কিছুটা কমতে পারে। তবে প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বাংলাদেশ কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে, এ জন্য সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কারণ ভারতের জন্য শুল্কহার বেশি হওয়ায় বায়াররা গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে সে দেশে বাণিজ্যে বেশি আগ্রহী হবে না। আর পাকিস্তানের শুল্কহার ১৯ শতাংশ হলেও এক শতাংশ সুবিধার জন্য বায়ার পাকিস্তানে যাবে না। তা ছাড়া পাকিস্তানের সেই সরবরাহ ক্যাপাসিটিও নেই।

জাহিদ হোসেন বলেন, সক্ষমতা বাড়াতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া হবে। তিনি বলেন, গ্যাসের অভাবে ফ্যাক্টরি চলে না। উৎপাদনে দেরি হলে সময়মতো অর্ডার দেওয়া হয় না। তখন প্রোডাক্ট বিমানে পাঠাতে হয় বা ডিসকাউন্ট দিতে হয়। আবার দেখা যায়, বন্দর থেকে মালামাল জাহাজে উঠাতে এক সপ্তাহ লেগে যায়। এনবিআর থেকে ডকুমেন্টস ক্লিয়ার হয় না। বন্দরের অদক্ষতার কারণেও অনেক সময় গতি মন্থর হয়। গত এক বছর ধরে বাংলাদেশে প্রায়ই রাস্তাঘাট বন্ধ করে অবরোধ করা হয়। এসব ঘটনা সরবরাহ চেইনকে বিঘ্নিত করছে। এসব উত্তরণে উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া শ্রমিক অসন্তোষও বড় একটি বাধা। আবার আন্তর্জাতিকভাবে বদনাম আছে, বাংলাদেশে ন্যূনতম মজুরি দিয়ে কাজ করানো হয়। এই ইমেজটা কাটাতে হবে। কারণ ইউরোপের মার্কেটের কনজিউমাররা সেন্সিটিভ। তা ছাড়া শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রাখলে ফ্যাক্টরি চলবে না এবং শ্রমিক অসন্তোষের সুযোগ অনেকেই নেয়। কারণ, বাংলাদেশকে অস্থির করতে পারলে বায়াররা অন্য কোথাও চলে যাবে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) নতুন সভাপতি চেয়ারম্যান তাসকীন আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিরলস প্রচেষ্টায় আমরা দেখতে পেয়েছি যুক্তরাষ্ট্র সরকার ট্যারিফ ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছে, যা আমাদের জন্যে কিছুটা স্বস্তির। তবে এই ট্যারিফের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ জ্বালানি সমস্যা, লজিস্টিক্স খাতের দুর্বলতা, পণ্যের বৈচিত্র্যের অভাব রয়েই গেছে। তাই ট্যারিফ শক কাটাতে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত কিছু পদক্ষেপ যেমন নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানির নিশ্চয়তা, উৎপাদন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, পণ্যের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শক্তিশালীকরণের পাশাপাশি রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য নিশ্চিত করতে হবে।