সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত শহীদ রায়হানের স্ত্রী

শিমুল দেব, উলিপুর (কুড়িগ্রাম)
০৩ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত শহীদ রায়হানের স্ত্রী

রাফনাজ বিনতে রায়হান রাওজা (১৬ মাস) জানেই না তার বাবা বেঁচে নেই। বড় হয়ে বাবা ডাকার মতো কাউকে পাবেই না শিশু রাওজা। তা নিয়ে চাপা কষ্ট থাকলেও বর্তমানে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ রায়হানুল ইসলাম রায়হানের (৩৫) স্ত্রী রিফাত জাহান রিতুর। এদিকে পরিবারের একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ পিতামাতাও। ২০২৪ সালে ১৯ জুলাই আন্দোলনে ঢাকার বাড্ডায় নিহত হন কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌরসভার মুন্সিপাড়ার আব্দুর রশিদের ছেলে রায়হান।

এলাকাবাসী ও স্বজন সূত্রে জানা গেছে, রায়হান উলিপুর থেকে এসএসসি পাস করার পর ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করেন। পরে ঢাকাতেই চাকরিজীবন শুরু করেন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহকারী ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন রায়হান। ৫ বছর আগে বিয়ে করেছেন এবং বর্তমানে তার ১৬ মাস বয়সী একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। তিনি ঢাকার বাড্ডা এলাকায় থাকতেন। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বাড়িতে এসে স্ত্রী ও কন্যা (৪ মাস বয়সী) সন্তানকে মাসের শেষে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী স্ত্রী ঢাকায় নতুন সংসার করার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুতে নতুন সংসার করা হয়নি রায়হান ও রিতু দম্পতির।

রায়হানের পরিবার জানায়, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই ঢাকার বাড্ডা এলাকায় জুমার নামাজ শেষে রাস্তায় বের হয়ে কোটাবিরোধী ও পুলিশের সংঘর্ষের মাঝে পড়েন রায়হান। সেই সময় একটি গুলি তার ডান চোখের কাছে লেগে পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। এ সময় পথচারীরা উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পিতা আব্দুর রশিদ বলেন, রায়হানের মৃত্যুর পর থেকে আমরা আর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছি না। সবসময় তার স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে থাকে। আর কেউ আমাকে আব্বু বলে ডাকে না, খোঁজখবরও নেয় না। আমার নিরীহ সন্তানকে যারা হত্যা করেছে, আমি তাদের বিচার চাই। রায়হান ছিল পরিবারের একমাত্র সন্তান। তার আয়ে চলত গোটা পরিবার। আমাদের ছোট সংসারে কোনো সমস্যা ছিল না। রায়হানের মৃত্যুর পর থেকে আমার সামান্য আয়ে খুব কষ্ট করে সংসার চালাতে হচ্ছে।

মা রাহেনা বেগম বলেন, যেদিন রায়হানের মৃত্যু হয়, তার এক ঘণ্টা আগেও আমার সঙ্গে কথা হয়। আজ এক বছর হলো ছেলের মুখে মা ডাক শুনি না। এ সময় ছেলে হত্যার বিচার দাবি করেন তিনি।

স্ত্রী রিফাত জাহান রিতু বলেন, আমার মেয়ে বড় হয়ে কাকে বাবা বলে ডাকবে? আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ কি হবে? পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিল আমার স্বামী। তার মৃত্যুতে আমরা অনেক কষ্ট করে দিনযাপন করছি। তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে যদি আমাকে কোনো চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হতো তাহলে আমি পরিবারের হাল ধরতে পারতাম। আর যারা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই।

জানা গেছে, রায়হানের মৃত্যুর পর কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ, জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন, বিএনপি ও জামায়তে ইসলামীর পক্ষ থেকে তার পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদান করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে রায়হানের পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে কোনো অনুদান এলে তা দেওয়া হবে।