যুক্তরাষ্ট্রের রেসিপ্রোকাল শুল্ক ও বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ
যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক চীন বাদে অন্য দেশগুলোর জন্য প্রায় সমান হারে শুল্ক নির্ধারণ করা একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। বিশেষ করে বাংলাদেশসহ পোশাক প্রধান রপ্তানিকারক দেশগুলোর জন্য এই শুল্ক ১৯-২০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা রক্ষা পেয়েছে।
এ জন্য আমরা মার্কিন প্রশাসনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, যারা সকল প্রকার অন্যান্য জটিল শর্ত এড়িয়ে একটি ন্যায্য ও প্রায় সমতাভিত্তিক শুল্ক কাঠামো প্রণয়ন করেছেন।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন টিমের অক্লান্ত প্রচেষ্টাও প্রশংসার দাবিদার। তাদের দক্ষতা ও কূটনৈতিক প্রজ্ঞার কারণেই বাংলাদেশ অন্যান্য প্রধান পোশাক রপ্তানি রপ্তানিকারক দেশগুলোর সমান সুযোগ পেয়েছে। তবে, এই সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য আমাদের উদ্যোক্তাদের আরও দক্ষ ও সচেতন হতে হবে।
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের ছোবলে নারীর শ্রমবাজার
বিশেষ করে, মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে মার্কিন ক্রেতাদের বোঝাতে হবে যে এই আমদানি শুল্ক আমদানিকারকদের বহন করতে হবে এবং পরিশেষে এটি চূড়ান্ত ভোক্তাকেই বহন করতে হবে। তবে এতে পণ্যের মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে, যা বিক্রি হ্রাসের সম্ভাবনা তৈরি করবে। এই পরিস্থিতিতে অর্ডার কিছুটা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে, ক্রেতারা অন্যায্যভাবে দাম কমানোর চেষ্টা করতে পারেন।
তবে, আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর জন্যও শুল্কের হার প্রায় একই রকম বা তার চেয়ে বেশি হওয়ায়, এই মুহূর্তে শক্তিশালী দরকষাকষিই একমাত্র উপায়। কারন অন্য যে দেশেই যাক, তাদের কমপক্ষে আমাদের সমান শুল্ক দিতেই হবে। বরং আমাদের এখানে ক্রয়াদেশ দিলে চীন বা ভারত থেকে শুল্ক বিবেচনায় সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। আমরা যদি বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টিকে থাকতে পারি, তবে ভবিষ্যতে চীন ও ভিয়েতনাম থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অর্ডার বাংলাদেশে স্থানান্তরিত সম্ভবনাও রয়েছে ।
আরও পড়ুন:
ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন মানবজাতি
এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের শিল্পকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশেষ করে, রপ্তানি বাড়াতে নীতিগত সহায়তা, সল্পসুদে ঋণের সুবিধা ব্যবস্থা জরুরি। পাশাপাশি, বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার চাপ ও শর্ত মোকাবিলা করে দেশের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হলো বেসরকারি খাত। তাই, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ বজায় রাখা অপরিহার্য। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে শিল্পের উন্নয়ন ঘটাতে হবে, যাতে বাংলাদেশ বৈশ্বিক বাজারে আরও শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারে। আশা করা যায়, সঠিক পরিকল্পনা ও কৌশলগত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এই নতুন সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আরও সমৃদ্ধি অর্জন করবে।
ফজলে শামীম এহসান: নির্বাহী সভাপতি ,বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)