মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি ঘোষণা
গত বছরের ৩০ জুলাই রাতে টেলিগ্রাম অ্যাপে এক বার্তায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের। তিনি জানান, ৩১ জুলাই দুপুরে সারাদেশে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালিত হবে। ঘোষণায় বলা হয়, ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা, হামলা, মামলা, গুম-খুন ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি হবে। একই সঙ্গে জাতিসংঘের মাধ্যমে তদন্ত করে বিচার ও ছাত্রসমাজের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়।
৩১ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টায় দেশের সব আদালত, ক্যাম্পাস ও রাজপথে এ কর্মসূচি পালনের কথা জানানো হয়। শিক্ষক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষকে একাত্মতা প্রকাশের অনুরোধ জানানো হয়। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৩০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা মুখে ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তুলে অনলাইনে প্রচার করেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে অনেকেই তাদের ফেসবুক প্রোফাইলে লাল ফ্রেম রাঙান। এদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
একদিন আগে ২৯ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিহতদের স্মরণে ৩০ জুলাই ‘শোক দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে। তারা মুখ ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ জানানোর কর্মসূচি দেন। এর জবাবে সরকার সমর্থকরা ফেসবুকে প্রোফাইল ছবিতে কালো ফ্রেম ব্যবহার করেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে গত বছরের ৩০ জুলাই দেশজুড়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক দিবস পালিত হয়। মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় প্রার্থনা হয়। অন্যদিকে এই দিন রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেন। রাজধানীর গুলিস্তানে প্রতিবাদী গান নিয়ে মিছিল করেন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা। মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে বাগ্বিত-া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পুরানা পল্টনে বামজোটের সমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগ দাবি করা হয়। এদিকে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ধাপে ধাপে খোলা হবে।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় নেতাসহ আটক সবার নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে আরও কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন। হত্যা, অবৈধ আটক ও নির্যাতনের বিচারের দাবিতে ৩০ জুলাই ডিআরইউ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতা তদন্তে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা চান।
চলমান সহিংসতা ঘিরে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ঢাকায় ২৬৪টি মামলা হয়, যার মধ্যে ৫৩টি হত্যা মামলা। আরও ৫টি মামলা প্রক্রিয়াধীন ছিল। ওই দিন পর্যন্ত ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয় ২ হাজার ৮৫০ জনকে। সারাদেশে গ্রেপ্তারের সংখ্যা অন্তত ১০ হাজার। এই সহিংসতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলাচিঠি লেখেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড। তিনি সহিংস দমন নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানান। সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি’ গঠনে চিঠি পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস জানান, আন্দোলনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি। তিনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জাতিসংঘ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ দেওয়া ও আইনবহির্ভূত হত্যাকা- নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানান।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ নেতা পাঁচ দিন ধরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) হেফাজতে ছিলেন। শিক্ষার্থীদের হত্যার প্রতিবাদে অভিভাবকরা ঢাকা মেডিক্যালের সামনে দাঁড়াতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। ‘বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র’-এর ব্যানারে তারা দাঁড়াতে চাইলে তাদের সরে যেতে বলা হয়।
এদিন জামায়াত নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার গণহত্যা আড়াল করতে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের বিষয়টি সরকার সামনে আনছে। অন্যদিকে ৩০ জুলাই বিকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহতদের দেখতে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। তিনি আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন।